বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান ‘একদলীয়’ শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে ‘আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আজকে একদলীয় শাসনব্যবস্থার যে ছদ্মবেশ, এই ছদ্মবেশ থেকে দেশকে বের করে আনতে হলে, জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিএনপির কোনো বিকল্প নেই্। আজকে আমাদের নেতার দিকে গোটা জাতি তাঁকিয়ে আছে পরিবর্তনের জন্যে। তার নেতৃত্বে আমাদেরকে দেশের জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরী।’
তিনি বলেন, ‘জনগনকে জাগিয়ে তুলতে না পারলে কোনো দিন কোনো আন্দোলনই সফল হয় না। তাদের জাগরণের মধ্য দিয়েই অতীতে বাংলাদেশের সমস্ত বিজয় আমরা অর্জন করেছি। আমরা বিশ্বাস করি সেই জাগরণের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবো।’
বুধবার সন্ধ্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই স্বাধীনতার যুদ্ধ, এই মুক্তিযুদ্ধ তার সমস্ত যে স্বপ্নগুলো ছিলো সেই স্বপ্নগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনো একটা রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করছে পরিকল্পিতভাবে তাদেরকেই ক্ষমতায় রাখার জন্য। এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। তারা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এই কাজ করছে, সেই লক্ষ্যটা রাজনৈতিক লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য হচ্ছে, তারা তাদের যে চিন্তাভাবনা সেই চিন্তাভাবনাগুলোকে এখানে বাস্তবায়িত করার জন্য একটিমাত্র দলকে তারা ভিন্ন আঙিকে ছদ্মবেশে রাখবে এবং সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, ‘৪৯ বছর পরে গোটা জাতি আজকে বিভক্ত। বিভাজন এমন এক পর্যায় চলে গেছে শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে। এমনকি কেউ এখন আর আওয়ামী লীগের একজন ছেলের সাথে বিএনপির বা অন্য দলের বিয়ের কথাও চিন্তা করতে পারছে না। দিজ ইজ দ্যা রিয়ালিটি। আজকে সর্বক্ষেত্রে এখন আমরা এটা দেখছি। এদেশের মানুষের যে মূল্যবোধগুলো, যে চিন্তগুলো, যে ধর্মবিশ্বাস, তাদের সমাজ বিশ্বাস, তাদের সংস্কৃতি বিশ্বাস সমস্ত বিশ্বাসগুলোকে পদদলিত করা হচ্ছে এবং সেটা রুট একটা শক্তি দিয়ে করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি প্রশাসন ও বিচার বিভাগের বিচারকদের রাজপথে মানববন্ধনের অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্য যখন আমরা দেখি প্রশাসনিক কর্মকর্তা যাদের বেতন হয় জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে, সেটা সব ধরনের প্রশাসনের কথা বলছি আমি। তারা যখন রাজপথে বিভিন্ন জায়গায় একটা বিশেষ দলের পক্ষে আপনার সভা করেন, মিছিল করেন, কথা বলেন এবং জনগণকে ধমক দেন। এই যে জনগণকে ধমক দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা এটা আমরা জানি এটা পুরোপুরি স্বৈরতন্ত্র। সেই স্বৈরতন্ত্র বাংলাদেশে আছে। আজকে সেই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে চেপে বসেছে। সেই ফ্যাসিবাদকে সরাতে হলে, স্বৈরতন্ত্রকে সরাতে হলে আন্দোলন ছাড়া অন্যকোনো বিকল্প নেই্।’
সরকার আদালতের মাধ্যমে সংবিধানকে নানাভাবে সংশোধন করার বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সংবিধান যেটা আছে সেই সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে যদি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ একটা রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে চাই, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে চাই। তবে সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর সভাপতিত্বে ও দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় স্থায়ী কমিটির আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বক্তব্য রাখেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকায় ভার্চুয়াল আলোচনায় যুক্ত থেকে আলোচকদের বক্তব্য শুনেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।