ফক্স নিউজের একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪২ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট হিসাবে মনে রাখবেন। উপরন্তু ৮ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে তালিকায় গড়পরতার আরো নিচে স্মরণ করবেন। অবশ্য এই জরিপের ২২ শতাংশ ভোটার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সর্বকালের সেরাদের একজন হিসাবে মনে রাখবেন। তাছাড়া আরো ১৬ শতাংশ ভোটার তাকে ওই গড়ের উপরের দিকে এবং ১০ শতাংশ গড়ের নিচের দিকে রাখবেন বলে ওই জরিপে বলা হয়েছে। এই জরিপ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন সিএনএন।
মূলত প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় যত এগিয়ে আসছে, সেই সঙ্গে আমেরিকার জনগণ এবং ইতিহাসবিদরা তাকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে দেখতে শুরু করেছেন। তারা ট্রাম্পকে এখনকার এবং কয়েক বছরের মধ্যে কীভাবে দেখবেন সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন। আর সেটা নিয়েই এখন আলোচনা হচ্ছে সেখানকার জনগণের মধ্যে। তবুও এটি খুব স্পষ্ট যে, ইতিহাসবিদরা এবং অনেক ভোটার এটা বিশ^াস করেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই তারা সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্মরণ করবেন।
যেখানে খুব স্বল্প পরিমাণ লোক তাকে সর্বকালের সেরা হিসাবে মনে রাখবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের পর থেকে দেশটির প্রেসিডেন্সির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইতিহাস কিভাবে বিভিন্ন প্রেসিডেন্টকে স্মরণ রাখবে তা নিয়ে আমেরিকানদের মতামত নিয়ে এই জরিপ তৈরি করে থাকে নিউজ ফক্স। এক্ষেত্রে স্মরণকালে সবচেয়ে কম রেটিং পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর আগে দেশটির কোন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো এত বেশি নেতিবাচক মনোভাব অর্জন করেননি। একমাত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জরিপের ৫টি বিভাগের প্রশ্নে এত কম রেটিং পাওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। তবু তিনি ট্রাম্পের মতো এতো কম রেটিং পাননি। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গ্যালাপ জরিপে ভোটাররা বুশকে ৩৬ শতাংশ নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। যেখানে তাকে একজন হতভাগ্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে সম্বোধন করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের ক্ষেত্রে মার্কিনিরা যে নি¤œ মাত্রার রেটিং দিয়েছেন, সাধারণত এমনটা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। ট্রাম্পের আগে অন্যকোন প্রেসিডেন্ট ২০ শতাংশের মতো কম রেটিং মার্ক স্পর্শ করেননি। ট্রাম্পের আগে সর্বনি¤œ রেটিংয়ের গড় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ যাবতকালের সেরাদের অন্যতম বলে র্যাংকিং করেছেন শতকরা ২২ ভাগ মানুষ। শীর্ষ ক্যাটেগরিতে ক্ষমতার মেয়াদান্তে যেকোনো প্রেসিডেন্টের জন্য এই হার সর্বোচ্চ। মেরুকরণের দিক দিয়ে ট্রাম্পের এই সফলতার চেয়ে তার নেতিবাচকতা বেশি বলে মনে করা হয়। ট্রাম্পকে যারা শীর্ষ বিভাগে স্থান দিয়েছেন তাদের সংখ্যা ঐতিহাসিক আদর্শের শতকরা হার ১৩ পয়েন্টের বেশি। তবে তাকে সর্বনি¤œ স্থান দিয়েছেন যারা তাদের সংখ্যা ঐতিহাসিক আদর্শের শতকরা ২৮ পয়েন্টের বেশি। এর আগে মেরিস্ট কলেজ পোলস্টারকে ভোটাররা বলেছিলেন যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্মরণ করা হবে।
পূর্বের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে যারা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজনকে দুর্বল পেসিডেন্ট হিসাবে মনে করা হয়। যেমন ৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড, ১৯৮০ সালের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং ১৯৯২ সালের ৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। শতকরা মাত্র ৭ ভাগ বলেছিলেন, ফোর্ডকে একজন দুর্বল প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখা হয়। এক্ষেত্রে কার্টারের হার ছিলো ১৫ শতাংশ এবং বুশের ছিল ৪ শতাংশ।
আগে থেকেই আমেরিকারর ইতিহাসবিদরা বছরের পর বছর ধরে বলে আসছিলেন ট্রাম্প হবেন সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্টদের অন্যতম। তাদের সে কথাই যেন ভোটারদের শতকরা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠা করলেন। ইতিহাসবিদদের রেটিংয়ের ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তবে তারা যথার্থ না হতে পারেন। তবে এটাও সত্য যে ট্রাম্পের কিছু অনুগত ভোটার ও রয়েছে যাদের মধ্যে ২২ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্পকে ইতিহাসের সেরা প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্মরণ করবেন তারা। তবুও যারা তাকে ব্যর্থ মনে করেন তারা সবসময় একটি বৃহৎ অংশ হয়ে থাকবেন।