‘আমরা মরে যাবো। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন’- তীব্র শীত ও তুষারপাত থেকে বাঁচার জন্য ঠিক এভাবেই আকুল আবেদন জানিয়েছেন বসনিয়ায় ক্রোয়েশিয়া সীমান্তের কাছে আশ্রয় শিবিরে থাকা কয়েক হাজার অভিবাসি। পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছানোর আশায় এই অভিবাসিরা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় আটকে আছেন। আকস্মিক ভারি তুষারপাত ও তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় আটকেপড়া অভিবাসিরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শনিবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমের লিপা শিবিরের তাঁবুতে গাদাগাদি করে অবস্থান করছে। আকস্মিক তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় তাদেরকে শীত থেকে বাঁচতে কম্বল ও স্লিপিং ব্যাগ জড়িয়ে রাখতে দেখা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশ ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে এইসব অভিবাসি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে বিহাক শহরের কাছাকাছি শিবিরের বেশিরভাগ অংশ আগুনে পুড়ে যায়।
আগুন লাগার পরও বসনিয়ার কর্তৃপক্ষ লিপাতে অভিবাসিদের জন্য নতুন থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে প্রায় ১ হাজার মানুষ এই তীব্র ঠান্ডায় খাবার সংকটে ভুগছেন। তাদের শরীরি গরম করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বেঁচে আছেন শুধু এইড গ্রুপগুলোর দেয়া খাদ্য সহায়তার ওপর ভিত্তি করে। এ অবস্থার নিন্দা জানিয়ে সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তারা।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাজেশন ফর মাইগেশন-এর বসিনিয়া মিশনের প্রধান পিটার ভ্যান ডার আউয়েরেট তার এক টুইট বার্তায় বলেন, তুষার পড়ছে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা। নেই উষ্মতা, নেই কিছুই। এইভাবে কেউ বাঁচতে পারে না। আমাদের এখন রাজনৈতিক সাহসিকতা এবং পদক্ষেপ দরকার।
শনিবার ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিল, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং ইউএন মাইগ্রেশন সহ একাধিক সহায়তা সংস্থার এক যৌথ বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এ বিষয়ে বিকল্প সমাধানের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, তুষারপাত অব্যাহত থাকায় এখনও ওই অঞ্চলগুলো অনিরাপদ এবং ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব শিবিরে উত্তাপের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ইতিমধ্যে হাইপোথার্মিয়া এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েছেন আটকে পড়া ব্যক্তিরা। শীতের এই অবস্থার অবনতির কারণে কেন্দ্রের বাইরে আটকে থাকা লোকেদের ন্যূনতম সুরক্ষা প্রদান করা এখন কর্তৃপক্ষের হাতে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়। লিপা শিবিরেই আটকে পড়া শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। অন্যদের পরিত্যক্ত ভবন এবং ক্যাম্পগুলোতে থাকার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। দেশটি যদি সর্বোচ্চ জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে অনেক মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।
পাকিস্তানি এক যুবক কাসিম জানান, আমরা পশুর মতো জীবনযাপন করছি। হয়তো পশুরাও আমাদের থেকে ভালোভাবে জীবনযাপন করে থাকে। যদি তারা আমাদের সাহায্য না করে আমরা মরে যাবো। তাই দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।
শনিবার পুলিশের সহায়তা নিয়ে বসনিয়া’র রেড ক্রস শিবিরগুলোতে পানি ও খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে। এ সময় কিছু অভিবাসি মুখে করোনা প্রতিরোধ মাস্ক পরা ছিলেন।