কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পেঁয়াজের বাজার। দাম কোনভাবে কমছেই না উল্টো আরো বাড়ছে। স্থানভেদে রাজধানীতে শুক্রবার সকালে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ২৪০-২৮০ টাকা পর্যন্ত। যেখানে গতকাল রাতেও এই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির কেজি প্রতি মূল্য ছিল ২০০ টাকা।
রাজধানীর মুগদা বাজার ও মুগদা মদিনাবাগ বাজার ঘুরে জানা যায় এখানে আপেল, বেদানা, নাশপাতি, মাল্টা, আঙ্গুর এর চাইতেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের এমন লাগামহীন দামে ক্ষোভ ক্রেতাদের মাঝে। পেঁয়াজের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন? এই প্রশ্ন সাধারণ ক্রেতাদের।
কেউ বলছেন, মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা দরে পেঁয়াজ কেনার পরেও দেশে কোন অজুহাতে এত দাম? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান তাদের।
মুগদা বাজারের মুদি দোকানদার খোকন জানান, সকাল থেকে তিনি ২৮০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। বলেন, শ্যামবাজার আড়ৎ থেকে ২৪০ টাকা করে আড়ৎদারদের কাছ থেকে কিনে আনেন কিন্তু আড়ৎদাররা কোন ক্যাশমেমো দেন না।
মুগদা বাজারের আরেকজন মুদি দোকানদার মুন্না। তার দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৫০ টাকা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার দোকানের পেঁয়াজ আগে কেনা ছিল তাই ৩০ টাকা কমে তিনি বিক্রি করতে পারছেন।
এই দোকানদর জানান, খিলগাঁও থেকে ২২০ টাকা করে পেয়াজ কিনে এনেছেন তিনি। এর পরিবহণসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে ২৫০ টাকায় বিক্রি না করলে কোন লাভ হয় না।
মুগদা মদিনাবাগ বাজারেরে দোকানদার শাকিল নয়া দিগন্তকে বলেন, তার দোকানে আজ সকাল থেকে ২৪০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাতেও তিনি ২০০ টাকা করে বিক্রয় করেছে। তিনি জানান, আগে ২০ টাকা ইনভেস্ট করে কেজিতে ৩ টাকা লাভ করতাম আর এখন ১৯৫ টাকা ইনভেস্ট করে ৫ টাকা লাভ করি। আগে সবাই ১ কেজি ২ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতো। এখন আড়াইশো গ্রাম, আধা কেজি করে কেনে। এই জন্য আমাদের বিক্রিও কম, লাভও কম।
পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুগদা মদিনাবাগ বাজারের এক দোকানদার নয়া দিগন্তকে বলেন, এই প্রশ্ন আমাকে না করে আড়তদারদের প্রশ্ন করেন। তারা সিন্ডিকেট করে জনগনকে তো মারছে সাথে আমাদের মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও গলাটিপে হত্যা করছে।
ক্ষুব্ধ এই দোকানদার বলেন, এই সিন্ডিকেটের চোরগুলোকে ধরে আইনের আওতায় আনা খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুগদা ব্যাংক কলোনী এলাকার আহমেদুল কবির জাকির বলেন, ফলের দামের চেয়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়ে গেছি। নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে এবং এটি স্থায়ীত্ব লাভ করলে জনগণ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের বর্তমান মূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। তিনি এলাকায় একটি টিসিবির গাড়ি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ৪০ টাকা মূল্যের একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মাত্র এক সপ্তাহে ২৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২৮০ টাকা হওয়া একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এখন এ অবস্থা থাকে সেটিও চিন্তার বিষয়। এই ৬ থেকে ৭ গুণ বৃদ্ধি পাওয়া মূল্যটা আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বাইরে। আমরা চাই অতিদ্রুত এই মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা হোক।