সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

পেঁয়াজে নাকাল নাগরিক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২৮৫ বার

পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। হাটে, ঘাটে, দোকান কিংবা পাড়া-মহল্লায়, সর্বত্রই পেঁয়াজ এখন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সমালোচনার মধ্যেই এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে আরো ৫০ টাকা। এ নিয়ে গত তিন দিনে ১০০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিদরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় পৌঁছার পরিপ্রেক্ষিতে কার্গো বিমানে করে দ্রুত বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল বিকেলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন জানান, সরকারের পক্ষে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তুরস্ক থেকে এবং বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবে। তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হবে, তত দিন এয়ার কার্গোতে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রাজধানীর মিরপুর-২ নাম্বার কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ। আর মিয়ানমার ও মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি। গত রোববার এ বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। আগের দিন গত বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকা কেজি দরে। চার দিনের ব্যবধানে দাম দাম দ্বিগুণ হয়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বাজারের সব ক্রেতাই পেঁয়াজের দিকে একবার নজর দেয়, তারপর একটা মুচকি হাসি দেয়, আর সুন্দর করে একটা কমেন্ট করে চলে যায়। ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে গতকাল মিসর থেকে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজিদরে। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক রফতানি বন্ধ করার পর থেকেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। এরপর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। রফতানি বন্ধ করার সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ৬০ টাকার পেঁয়াজ ১০০ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপর বেশ কিছুদিন পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারো পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না- এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন, ফলে ১০০ টাকার পেঁয়াজ পৌঁছে যায় ১২০ টাকা। এ

রপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক বক্তৃতায় বলেন, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এই বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টিকে আরো উসকে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ১২০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর সপ্তাহের শেষ দিন গতকাল শুক্রবার তা আরো বেড়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে কখনো দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অতি অল্পসময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া সমুদ্র পথে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে, পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় এ চালান শিগগিরই বাংলাদেশে পৌঁছাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহনে কয়েকদিনের জন্য সমস্যা হয়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে এবং মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেকবার সভা করেছে, নিয়মিতভাবে আমদানিকারকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি এবং নৈতিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে। আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাস করা হয়েছে। স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সে মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে।

দেশে পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি জোরদার করা হয়েছে। ৩৫টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্রয় করা হচ্ছে।

পাশাপাশি প্রতিদিনই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। কেউ পেঁয়াজ অবৈধ মজুত করলে, কারসাজি করে অতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করলে বা অন্য কোনো উপায়ে বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করলে, তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার অভিযান জোরদার করেছে। কিন্তু ফলাফল উল্টো। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে।

এ দিকে পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সবজির দাম। শীতকাল যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে শীতকালীন সবজির দাম। খুচরা বাজারে এখন প্রতি পিস ফুলকপির দাম ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা। টমেটো, গাজর, শসা টপকে গেছে শতকের ঘর। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। বাজারে শিম ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও উচ্ছে পৌঁছেছে ১০০ টাকার ঘরে। প্রতি কেজি করল্লা, বেগুন, বরবটি, পটল ও ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মুলা আর চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com