মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

বাবরি মসজিদ রায়ে মুসলমানরা ‘সুবিচার পায় নি’

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২৮০ বার

ভারতের অযোধ্যার ‘বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলা’ নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলতে শুরু করেছেন ভারতের মুসলমান সমাজের অনেকেই। রায় ঘোষণার ঠিক পরেই যদিও মুসলমানদের একটা অংশ বলেছিলেন যে সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে নিতেই হবে, কিন্তু গত এক সপ্তাহে সেই মনোভাব পাল্টিয়েছেন মুসলিম সমাজের ধর্মীয়-সামাজিক নেতা এবং আইনজ্ঞদের অনেকেই।

ওই রায় যে তাদের ভাবাবেগকে আহত, ব্যথিত করেছে, সেটা স্পষ্ট করেই বলা শুরু হয়েছিল রায় বেরুনোর পর থেকেই। তবে রিভিউ বা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করা হবে কী না, তা ঠিক করতে রবিবার বৈঠকে বসছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। ওই বোর্ডের সচিব ও অযোধ্যার জমি মামলায় মুসলিম পক্ষের অন্যতম প্রধান আইনজীবী জাফরইয়াব জিলানি অবশ্য বলেন, প্রথম থেকেই তার মনে হচ্ছিল যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা উচিত। খবর বিবিসি বাংলার।

তিনি বলেন, রায় বেরুনোর পরেই কয়েকটি বিষয়ে ত্রুটি আছে বলে আমার মনে হয়েছিল। সেজন্যই আমি মনে করছি যে রিভিউ হওয়া উচিত। একটা কারণ হল, এক নম্বর বাদী – ভগবান রামলালার মূর্তি, যেটি ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে বসানো হয়েছিল, সেটি বেআইনি ছিল বলে জানিয়েছে কোর্ট। যে মূর্তিটি বেআইনিভাবে বসানো হয়েছিল বলে শীর্ষ আদালতই জানাল, সেটিকেই জমির অধিকার দেওয়া হল! এছাড়া, আদালত তো এটাও স্বীকার করেছে যে অন্তত ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৪৯ অবধি সেখানে নামাজ পড়া হত। তার অর্থ, ওই সময়কালে মুসলিমদের দখলে ছিল ওই জমিটি! এই দুটো বৈপরীত্য কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না আমার।

‘ভারতের মুসলমানরা সুবিচার পায় নি’

রিভিউর আবেদন জানানোর দাবি মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ থেকেই উঠছে কারণ গত এক সপ্তাহে রায়ের যা যা বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে নানা সংবাদমাধ্যমে, তার পরে মুসলমান সমাজের অনেকেই এখন মনে করতে শুরু করেছেন যে রায়ের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে গেছে, যে কারণে রিভিউর আবেদন দাখিল করাই উচিত।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের নেতা মুহম্মদ কামরুজ্জামানের কথায়, গত কয়েকদিনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি থেকে শুরু করে আইন বিশেষজ্ঞরা রায়ের যেসব বিশ্লেষণ দিয়েছেন, তা থেকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মনে হতে শুরু করেছে যে এই রায়ে মুসলমানরা সুবিচার পায় নি, বে-ইনসাফি হয়েছে তাদের সঙ্গে। সেজন্যই মহামান্য আদালতের কাছেই আবারও পুনর্মূল্যায়নের আবেদন জানানোর দাবি সমাজের ভেতর থেকে স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।

একদিকে যেমন রিভিউয়ের দাবি উঠছে, তেমনই মুসলমানদের অনেকেই বলছেন, বাবরি মসজিদ যেখানে ছিল, তারা সেই জমিটির অধিকার চেয়েছিলেন তারা, অন্য কোথাও জমি তো চান নি । তাই পাঁচ একর বিকল্প জমি দেওয়ার আদেশ নিয়েও মুসলমান সমাজের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠছে। মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন জামিয়তে উলেমা-এ-হিন্দ বলছে অর্থ অথবা ‘বিকল্প জমি’ মসজিদের জমির বিকল্প হতে পারে না।

জমিয়তের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মওলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলছিলেন, মুসলমানরা তো আদালতের কাছে নির্দিষ্ট ওই জমিটি, যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল, সেটার অধিকার চেয়েছিল। সম্পত্তির ভিক্ষা তো মুসলমানরা করে নি। জমিয়তে উলেমা-এ হিন্দ সেজন্যই বলেছে যে পাঁচ একর জমি তো আমরাই ভিক্ষা করে কিনতে পারি। ওই জমি পেয়ে আমরা তাই যে খুব খুশি তা নয়।

রিভিউর কথা ভাবছে হিন্দু মহাসভাও

অন্যদিকে অযোধ্যা মামলাটির অন্যতম পক্ষ, হিন্দু মহাসভাও রিভিউয়ের আবেদন করার কথা ভাবছে সম্পূর্ণ অন্য কারণে। তাদের যুক্তি অযোধ্যার ওই জমিতে যখন রামমন্দিরেরই অধিকার দিয়েছে আদালত, তখন মুসলমানদের আবার পাঁচ একর জমি কেন দেওয়া হবে?

বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছিলেন যেসব করসেবক তাদের বিরুদ্ধে যত ফৌজদারী মামলা রয়েছে, সেগুলোও তুলে নেওয়ার আবেদন করেছে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে। এই হিন্দু মহাসভারই সদস্য গোপাল সিং ভিশারদ ১৯৫০ সালে ওই জায়গাটিতে পুজো করার অধিকার চেয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com