একদিনের ব্যবধানে প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে সময়ের আলোচিত বস্তু পেঁয়াজের দাম এখন ২৫০ ছুঁয়েছে। দেশের অনেক স্থানের বাজারেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির এ দাম দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ২৮০ টাকাতেও এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ক্রেতারা। এ অবস্থায় দোকানদারা বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে দোকানে পেঁয়াজ রাখাই বাদ দিয়েছেন। আবার সামান্য কিছু বিক্রি করলে একান্ত চেনা-পরিচিত ক্রেতাদের কাছেই তা বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের আশঙ্কা, যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে অচিরেই পেঁয়াজের দাম ৩০০ ছাড়াতে পারে।
ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকলে আমাদের তো পেঁয়াজের ব্যবহারই বাদ দিতে হবে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের বেশি দামে কিনতে হয় বলে বাধ্য হয়েই আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। আর পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে যেসব পেঁয়াজ আনা হচ্ছে তাতে খরচ পড়ে যাচ্ছে অনেক বেশি। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদের বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
আকস্মিকভাবে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ হঠাৎই ৮০, ১০০, ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। সাধারন মানুষ আশা করেছিল সরকারের প্রচেষ্টায় দাম হয়তো সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। কিন্তু নানান টালবাহানায় পেঁয়াজের ঝাঝ আরো ঝাঁঝঁলো হয়ে উঠায় সাধারণ মানুষ ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন। এর আগেও একবার ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র দুই থেকে তিন দিন। কিন্তু এবার সেটি না হওয়ায় এই অতি প্রয়োজনীয় পণ্যটি সাধারনের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় গৃহিণীসহ সকলের মাঝে ক্ষোভ, হতাশা বেড়েই চলেছে। খোলা বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ থাকার পরেও কেন তা নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না এ জন্য সকলে সরকারের পাশাপশি সিন্ডিকেট চক্রকে দায়ী করছেন।
বগুড়ায় পেঁয়াজের কেজি ২৮০ টাকা
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ ২৫০-২৮০ টাকা কেজি দরে কেনাবেচা হয়েছে। সরেজমিনে শুক্রবার বগুড়ার ফতেহ আলী বাজার, রাজা বাজার, খান্দার বাজার, রৌ বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২৫০-২৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনছেন ক্রেতারা। গত সপ্তাহেও বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে ১৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
সীমান্তে দেখা গেছে পেঁয়াজ রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ। গত সোমবারে হিলি সীমান্ত পার হওয়ার সময় অনেকের কাছে থেকে কাস্টমস ও বিএসএফ এক কেজি পেঁয়াজ পর্যন্তও ব্যাগ থেকে রেখে দিয়েছে।
বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা গৌরাঙ্গ দাস ও হাসান জানান, আগে যেমন ১ কেজির কম কেউ কিনতনা। এখন বেশিরভাগ ক্রেতাই ২৫০ গ্রাম করে কিনছেন। দাম বেশি নিয়ে অনেকের সাথে বাক বিতন্ডাও হচ্ছে প্রতিদিন।
বগুড়া রাজা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানী সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ তিন চার দিনের বেশি রাখা যায় না, পঁচে যায়। দেশী পেঁয়াজ শেষের দিকে। নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত সংকট কাটবে না। তিনি আরো জানান, কাশিনাথপুর, পাবনা, বেড়া, সাথিয়া, সুজা নগর, নাটর, কুষ্টিয়া, ঈশ^রদী, মেহেরপুর এসব জায়গায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়। সেখানকার মহাজনরা যা বিক্রি করে তাই আমরা নিয়ে আসি। অন্যদিকে মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
নীলফামারীতে পেঁয়াজ ২২০ টাকা
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে প্রতিদিনই লাগামহীনভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের বাজার। দু’দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজিতে দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। গতকাল শুক্রবার নীলফামারীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা দরে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। আর পাইকারী বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকা। নীলফামারী জেলা সদরের সবচেয়ে বড় বাজার নীলফামারী শাখামাছা বাজার। শুক্রবার বন্ধের দিন যারা ২ থেকে ৩ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন তারা এখন ২৫০ গ্রাম থেকে আধা কেজি পেঁয়াজ কিনছেন। সাব্বির হোসেন, তসলিম আলী, হরিপদসহ অনেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান সরকার কোন ভাবেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ২২০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনলে অন্যান্য খরচ কিনব কিভাবে।
নেত্রকোনায় দুইদিনে বেড়েছে ১০০ টাকা
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার মেছুয়া বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখন ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের দিন ২০০ টাকা, তার আগের দিন ১৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেলেও গত বৃহস্পতিবার ২০০ ও শুক্রবার ২৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
নেত্রকোনা শহর এলাকার গৃহিণী শাহানা আক্তার, পেয়ারা বেগম ও শ্রাবন্তী দাস তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রতিনিধিকে বলেন, যে পেঁয়াজ ছাড়া একদিন চলে না তা এখন আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। যে সরকার সামান্য পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রন করতে পারে না তারা ক্ষমতায় থাকার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে।