যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের দুটি আসনের রানঅফ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। স্থানীয় সময় বুধবার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয়কক্ষে ডেমোক্র্যাট আধিপত্য নিশ্চিত হওয়ায় দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আইনি এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হল।
গত মঙ্গলবার এই রানঅফ নির্বাচনে একটি আসনে দায়িত্বরত রিপাবলিকান সেনেটর কেলি লেফলারকে পরাজিত করেন ডেমোক্র্যাট রাফায়েল ওয়ারনক। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সাবেক গির্জার ব্যাপ্টিস্ট ধর্মপ্রচারক ওয়ারনক জর্জিয়া থেকে মার্কিন সিনেট যাওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ।
রাজ্যটির অপর আসনে রিপাবলিকান ডেভিড পারডুকে হারিয়ে ৩৩ বছর বয়সী তথ্যচিত্র নির্মাতা ডেমোক্র্যাট জন অসফ সিনেটের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এ জয়ে উভয়কক্ষে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর তার পক্ষে উদারপন্থি বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া, করোনাভাইরাস ত্রাণ থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অগ্রাধিকারমূলক আইনি এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন সহজ হবে।
জয় নিশ্চিতের পর এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, ‘গতকাল জর্জিয়ার ভোটাররা পরিস্কার একটি বার্তা দিয়েছেন। তাদের মতে; আমরা যে সংকটগুলোর মুখোমুখি হয়েছি সেগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ চান তারা এবং তা এখনই চান।’
জর্জিয়ার এই ফল যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করল। ১৯৩২ সালের পর ট্রাম্প প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি এক মেয়াদের মধ্যেই হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের উভয়কক্ষে নিজ দলের ভরাডুবির কারণ হলেন।
ডেমোক্র্যাটরা জর্জিয়ার এই দুটি আসন পাওয়ায় সিনেটে যেকোনো বিলে ভোটের ক্ষেত্রে ফলাফল ৫০-৫০ এ দাঁড়াতে পারে; সেক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তার ‘সিদ্ধান্তমূলক ভোট’ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
এদিকে ভোট ও ভোটের ফলাফল গণনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে (ইউএস ক্যাপিটল) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দাঙ্গার ঘটনায় ওয়াশিংটনের চারপাশের রাস্তাগুলোতে ভারী পাহারা বসানো হয়েছে। প্রচুর পুলিশ সদস্য রাস্তাঘাট ঘিরে রেখেছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি রয়েছে।
রেপ্তার করা ৫২ জনের মধ্যে লাইসেন্সবিহীন পিস্তল বহন করছিলেন চারজন। কারফিউ লঙ্ঘন ও বেআইনি প্রবেশের জন্য ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় নিষিদ্ধ অস্ত্র বহনের জন্য। তিনি আরও জানান, হামলাস্থল থেকে দুটি পাইপ বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি রাজধানীর ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির কার্যালয়ের সামনে অন্যটি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সদর দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে।
যা হয়েছিল-
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে (ইউএস ক্যাপিটল) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা ভবনের জানালা ভাঙচুর করে। সেইসঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ উগ্র জনতাকে হটাতে পুরো ভবন অবরুদ্ধ করে ফেলে।
গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা বুধবার কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে বসেছিলেন। বিক্ষোভের নামে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের আগ্রাসী তাণ্ডবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় অনুমোদন হয়নি। অবরুদ্ধ পার্লামেন্ট ভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নিয়েছে।
ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর শুরু করেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। ভাঙচুরের পাশাপাশি সেখানে গোলাগুলিও হয়েছে। বেশ কজন ক্যাপিটল পুলিশ অফিসার সামান্য আহত হয়েছেন।
কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালে হোয়াইট হাউজের সামনে র্যালিতে জড়ো হন হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক। সেই সমাবেশের বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই হাল ছাড়ব না, আমরা কখনোই পরাজয় স্বীকার করব না। আমরা জালিয়াতি রুখে দেব।’ এরপই ট্রাম্প সমর্থকরা পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে ঢুকে সন্ত্রাসীরা কর্মকাণ্ড শুরু করে।