ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনার জন্য আবারো একটি বিল পেশ করতে চলেছে সে দেশের পার্লামেন্টে।
সোমবার শুরু শীতকালীন অধিবেশনের কর্মসূচিতেই বিতর্কিত এই বিলের উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলটি আগেও একবার পেশ হয়েছিল, কিন্তু আসামসহ উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হওয়ায় তখন সেটি পাশ করানো যায়নি।
ইতিমধ্যেই লোকসভার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। তাই নতুন করে বিল পেশ করতে হচ্ছে সরকারকে।
এই বিল পাশ হলে নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের হিন্দু-বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন আর পার্শি মানুষ, যারা কথিত ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতে চলে এসেছেন, তারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।
ওই বিলের বিরুদ্ধে আসাম আর উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। প্রতিবাদে নেমেছিল অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গেই উত্তরপূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও।
এবারও বিল পেশের খবর বেরতেই আসামের নানা জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে।
নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে যেসব সংগঠন পথে নেমেছে, তার মধ্যে অন্যতম কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব রাতুল হোসেইন বলছিলেন, “ভারতীয় সংবিধানের মূল আধার হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু এই বিলে সেটাকেই ধ্বংস করে দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে। এদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে ধর্ম কোনো ভিত্তি হতে পারে না, আর এই বিলে সেটাই করা হচ্ছে।”
জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা এনআরসি-তে যে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পরেছে, তাদের মধ্যে মুসলমান ছাড়া অন্যদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্যই এই বিল আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য হোসেইনের।
আসামের অনেক বাংলাভাষী হিন্দু, যাদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, তারা বিবিসিকে নানা সময়ে বলেছেন যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়ে গেলেই যে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটাই বিজেপি-র নেতারা তাদের বলেছেন।
বিলটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূল কারণ ছিল নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনা হলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার যে শর্ত আসাম চুক্তিতে আছে, সেটা লঙ্ঘিত হবে।
নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে প্রচারভিযান চালাচ্ছে। এখানে কলকাতার এক জনসভায় বিজেপি প্রধার অমিত শাহ্।
এটা যেমন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিরোধী নেতাদের ভাষ্য, ওদিকে বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকাতেও নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা রয়েছে – কিছুটা অন্যভাবে, বলছিলেন শিলচরের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের প্রধান সুস্মিতা দেব।
“ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নেতারা এখন বিজেপির আনা এই বিলের বিরোধিতা করছেন ঠিকই, কিন্তু সেখানকার মানুষের ভোটে তো বিজেপি সেখানে সুইপ করে জিতেছে আর তাদের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রেও তো লেখা ছিল যে এই বিল তারা আনবে। সেটা তখন দেখেন নি আপার আসামের মানুষ – যারা বেশিরভাগই অসমীয়া হিন্দু? এই বিলে আসামের বাঙালিদের কোনও লাভ হবে না,” মন্তব্য সুস্মিতা দেবের।
তবে বরাক উপত্যকার কংগ্রেস নেতারা ওই বিলের সরাসরি বিরোধিতায় না গিয়ে সংশোধন চাইছেন। এবং এই প্রশ্নে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ আছে।
দেব বলছিলেন, “আমরা চাই ধর্ম নিরপেক্ষভাবে, সব মানুষকে নাগরিকত্বের অধিকার দিক সরকার।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাশ বিবিসিকে জানিয়েছেন, যেভাবে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিল পাশ হয়েছে লোকসভা আর রাজ্যসভায়, সেভাবেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও পাশ হয়ে যাবে বলেই তাদের আশা।
আগের বারের প্রতিবাদের কথা মাথায় রেখে এবার আগেভাগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বে অন্যান্য রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও জানান দাশ।
সূত্র : বিবিসি