মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন

পেঁয়াজের বাড়তি দাম পেতে যত্ন নিচ্ছেন কৃষক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২৯১ বার

টানা দুই সপ্তাহ আকাশচুম্বী দামে কেনাবেচার পর রাজবাড়ীর বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। এরই মধ্যে বাজারে উঠেছে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ। রোববার সকালে রাজবাড়ীর বড় বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে, আর পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে পেঁয়াজের আকাশচুম্বি মূল্য দেখে বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন রাজবাড়ীর কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি বাজারে আসবে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেই সহনীয় পর্যায়ে আসবে পেঁয়াজের দাম।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছরও রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ২৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে । সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে কালুখালী উপজেলায় এ থেকে ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন পেয়াজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন তারা।

রোববার সকালে রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিনবাড়িয়ার চরাঞ্চলে ঘুরে দেখাযায়, সেখানে মাঠের পর মাঠ মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। প্রতিটি পেঁয়াজের ক্ষেতেই ব্যস্ত কৃষক। বাজারে বাড়তি দাম তাই যাতে দ্রুত সময়ে পেঁয়াজ সংগ্রহ করা যায় সে জন্য বাড়তি যত্ন নিতে ব্যস্ত তারা।

এ সময় কৃষক হারুন মোল্লা বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ রোপন করতে সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। গত বছর পেঁয়াজ তোলার সময় বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ পচে গেছে। গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে আমার আড়াই লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। ঢাকার শ্যাম বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। আমরা যেই ট্রাকে করে পেঁয়াজ নিয়েছি তার ভাড়া দেওয়াই কষ্ট হয়েছে। এ বছর পেঁয়াজের বাজার ভালো, এই বাজার একইভাবে থাকলে কৃষক লাভের মুখ দেখবে।

অপর কৃষক হাচেন জমাদ্দার বলেন, হারভাঙ্গা পরিশ্রম করে কৃষক। বর্তমানে সার, পেয়াজ বীজ ও শ্রমিকের যে মূল্য এতে অনেক খরচ হয়। আল্লাহ ছাড়া কৃষকের দিকে কেউ তাকায় না। এতকাল পেঁয়াজে লোকসান হয়েছে তখন তো আপনারা আমাদের খোজ নেননি? এই পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষক তাদের গত বছরের দেনা পরিশোধ করবে।

কৃষক আরজু মনি বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপনের পর ৪৫ দিনের মধ্যে তোলার সময় হয়। এখন বাড়তি দাম পেতে অনেকেই পেঁয়াজ তোলা শুরু করেছে। আবার অনেকে অতিরিক্ত যত্ন নিচ্ছেন। অনেকে পানি ও সার প্রয়োগ করছেন। তবে এক সপ্তাহ বা দশ দিনের মধ্যেই পুরোপুরিভাবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলা সম্ভব হবে। এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসলে আর সংকট থাকবে না।

এদিকে রোববার দুপুরে রাজবাড়ীর পেঁয়াজের হাটে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। তবে তার পরিমান কম। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় পুরাতন পেঁয়াজের দাম কমেছে।

এ সময় ব্যাবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, রাজবাড়ী জেলায় যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় তা আশেপাশের জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজবাড়ী বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে যে কারণে দামও কমেছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পেয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় নেমে আসবে বলে দাবী করেন তিনি।

রাজবাড়ীর বাজারে পেয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক মাসুদ রানা বলেন, বর্তমানে বাজারে যে দাম আছে তাতেও কৃষক লাভবান। পেঁয়াজের মন যদি তিন হাজার টাকা থাকে তাও কৃষক লাভবান হবে। এর চেয়ে কমে গেলে লোকসানে পরবে কৃষক। সেই সাথে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবী জানান তিনি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন সেক বলেন, রাজবাড়ী জেলায় প্রতি বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। সারাদেশে শতকরা ১৩ ভাগ পেঁয়াজ রাজবাড়ী থেকে যোগান দেওয়া হয়। পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের প্রনোদনা ও প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কর্মকর্তারা সব সময় পরামর্শ প্রদান করে আসছে।

এছাড়াও পেঁয়াজের দুটি জাত রয়েছে এর মধ্যে তাহেরপুরি ও কিং পেয়াজ। কিং জাতের পেঁয়াজ ফলন বেশি হওয়ায় এর চাষও বেশি হয়। এ বছর রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। পাশাপাশি পেঁয়াজের বাড়তি দামে লাভবান হবেন কৃষক।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com