বিশ্বের সেরা পুলিশ বাহিনীতে বাংলাদেশী-আমেরিকানরা আবারো দিপ্ত প্রত্যয়ে বাঙালির জয়গান গাইলেন। এতে সামিল হন নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনী তথা এনওয়াইপিডির শীর্ষ কর্মকর্তা, নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্তরের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও। ছিলেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির কর্মকর্তা থেকে মার্কিন এটর্নী, ব্যবসায়ী, সমাজ-সংগঠক এবং নারী জাগরণের নেতৃরা। ৫ বছর আগে ‘বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন’ তথা বাপার যাত্রা শুরু হয়েছিল ছোট্ট একটি বেসমেন্ট থেকে, ১৫ নভেম্বর শুক্রবার রাতে একই অনুষ্ঠান হলো দু’হাজারের অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বিশাল অডিটরিয়ামে। ‘পঞ্চম বার্ষিকী এওয়ার্ড ডিনার’ নামে এ অনুষ্ঠানে সহ¯্রাধিক পুলিশ অফিসার জড়ো হন সপরিবারে। এনওয়াইপিডিতে ক্যাপ্টেন পর্যন্ত পদোন্নতি পাওয়া বাঙালি অফিসারদের প্রশংসাও উচ্চারিত হলো ডিপার্টমেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাগণের শুভেচ্ছা অভিযাত্রায়। বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে কমিউনিটি সার্ভিসের জন্যে এওয়ার্ড প্রদান করা হয় প্রবাসের খ্যাতনামা আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদারকে।
বাপার প্রেসিডেন্ট সুজাত এম খান, ট্রাস্টি মাসুদ রহমান, মিডিয়া লিয়াঁজো জামিল সারওয়ার এবং নাসাউ কাউন্টি পুলিশ কমিশনার প্যাট্রিক জে রাইডারকে পাশে নিয়ে মজুমদারকে এই এওয়ার্ড প্রদান করেন নিউইয়র্ক পুলিশের প্রধান টেরেঞ্চ মনাহেন। উল্লেখ্য, অভিবাসী সমাজের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন সমাজ-সংগঠক এন মজুমদার নিজ এলাকা নোয়াখালী অঞ্চলের আর্ত-মানবতার কল্যাণের পাশাপাশি এই কমিউনিটির যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকেন। সমাজকর্মের জন্যে তিনি নিউইয়র্ক স্টেটের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ‘মজুমদার ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এওয়ার্ড গ্রহনের অনুভূতি ব্যক্তকালে মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, মানুষের জন্যে কাজ করছি। ইতিপূর্বে কংগ্রেসনাল এওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মাননা পেয়েছি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল বিশ্বের সেরা পুলিশ বাহিনীতে বাংলাদেশী চৌকষ অফিসারদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত বাপার এই এওয়ার্ড। এটি আমাকে আরো অনুপ্রেরণা জুগাবে, উৎসাহিত করবে মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগে। এ সময় বছরের ‘সেরা পুলিশ অফিসার’র এওয়ার্ড প্রদান করা হয় সার্জেন্ট মাহবুবুর খান, ‘সিভিলিয়ান অব দ্য ইয়ার’র এওয়ার্ড দেয়া হয় কায়সার মঞ্জুর এবং এওয়াইপিডির সেরা নারী অফিসার’র এওয়ার্ড দেয়া হয় লরি পোলককে।
ক্ইুন্সে দ্য মিকেলী ইলাজিয়ো অডিটরিয়ামের এ অনুষ্ঠান শুরু হয় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। এরপর বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্যগণকে মঞ্চে নিয়ে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এরা হলেন : প্রেসিডেন্ট-সুজাত খান, জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট-তারাকুর চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট-মোহাম্মদ রহমান, জেনারেল সেক্রেটারি-হুমায়ূন কবীর, কোষাধ্যক্ষ-এমডি রহমান, কো-ট্রেজারার-সাখাওয়াত হাফিজ, ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর-করম চৌধুরী, সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস-ফুয়াদ হুসাইন, মিঢিয়া লিয়াঁজো-জামিল সারোয়ার, কমিউনিটি লিঁয়াজো-শেখ আহমেদ, করেসপন্ডিং সেক্রেটারি-মো. চৌধুরী। এ সময় মঞ্চে আরো ছিলেন বাপার ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার এ কে এম আলম, এরশাদুর সিদ্দিক, মাসুদ রহমান, মেহেদী মামুন, মো. হালিম, রাশিকুর মালিক, সরদার মামুন, মাহবুবুর জুয়েল, আব্দুল্লাহ খন্দকার, মোহাম্মদ মকিজ, সাঈদ আলী, মহিউদ্দিন আহমেদ, হাসান আহমেদ, রাজুব ভৌমিক, হাসী আকতার, সোনিয়া বড়–য়া প্রমুখ।
এ সময় প্রদত্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে নিউইয়র্ক পুলিশের প্রধান টেরেঞ্চ মনাহেন বাংলাদেশী পুলিশ অফিসারদের দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনের পাশাপাশি মেধাগত উৎকর্ষ সাধনের যে ধারা বাংলাদেশীরা প্রকাশ করছেন, তা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে এনওয়াইপিডির কমিশনার হবেন বাংলাদেশী এই চৌকষ অফিসারেরা-এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।’ বিশাল এই পুলিশ বাহিনীতে বহু জাতি, ভাষা, বর্ণের অফিসার রয়েছেন। সবকিছুকে ছাপিয়ে বাঙালিরা বরাবরই প্রশংসার পাত্র হচ্ছেন-উল্লেখ করেন পুলিশের চীফ মনাহেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ব্রুকলীন বরো প্রেসিডেন্ট এরিক এডাম বিপুল করতালির মধ্যে বলেন, কমিউনিটিতে এনওয়াইপিডির আস্থা বাড়াতে বাঙালি অফিসারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সর্বস্তরের মানুষের সমাগম ঘটিয়ে আজকের এ অনুষ্ঠান সম্পর্কউন্নয়নের ক্ষেত্রে নয়ামাত্রা আনবে অবশ্যই। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীম হোসেন বলেন, ‘এই সিটিতে বাংলাদেশীরা নানা ক্ষেত্রেই সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। এনওয়াপিডিতে সাফল্যের সেই ধারা সবচেয়ে অগ্রসরমান-যা আমাদেরকেও অভিভূত করছে।’ জমজমাট এ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী শাহ মাহবুব। তার গানে মাতোয়ারা হয়েছিলেন উপস্থিত সকলেই অর্থাৎ গানে গানে নেচেছে গোটা মিলনায়তন।
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিত্বকারি বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন কুইন্স ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এবং ইউএস সুপ্রিম কোর্টের এটর্নী মঈন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটির সেক্রেটারী রুহুল আমিন সিদ্দিকী, শিক্ষা সম্পাদক আহসান হাবিব, মজুমদার ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট রেক্সোনা মজুমদার, ডেমক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক ফাহাদ সোলায়মান, সাংস্কৃতিক সংগঠক ফরিদা ইয়াসমীন, সমাজ সংগঠক আফিস বারি টুটুল, মুনমুন এইচ বারি, এটর্নী পেরী ডি সিলভার, এমআইটি ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল আলিম, ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী রব চৌধুরী প্রমুখ।