তিনটি তারিখ। তিনটিই গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকার ইতিহাসে। একটি ৩রা নভেম্বর। তারপর ৬ই জানুয়ারি আর সবশেষ ২০শে জানুয়ারি। একই সূত্রে গাঁথা এই তিনটি তারিখ। তারিখ তিনটি শুধু মার্কিনমুল্লুকে নয়, তামাম দুনিয়াজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ঝড় বইয়ে দিয়েছে। ইতিহাস গড়েছে।
ইতিহাস ভেঙেছে।
৩রা নভেম্বর ছিল আমেরিকার নির্বাচন। নানা নাটকীয়তা হয়েছে এই নির্বাচন নিয়ে। অন্যদিকে, ৬ই জানুয়ারি ছিল বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট ঘোষণার দিন, যে দিনটিতে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছে ট্রাম্প সমর্থকরা। গুলি চলেছে। পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে আইনপ্রণেতাদের। তবে সব অন্ধকার কেটে আলোর পথেই হেঁটেছে আমেরিকা। ট্রাম্পের ডান হাত মাইক পেন্স জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি সামলেছেন। রাজপথে উন্মত্ত সমর্থকদের থামাতে রক্ত ঝরেছে, তবু অটল থেকেছেন তিনি। বার বার শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নিজ দলের বিরুদ্ধে হলেও গণতন্ত্র আর নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প ছাড়া প্রায় সকলেই। এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় কলঙ্ক লেপন হয়েছে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায়। যা রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ২০৬ বছরের ইতিহাসের।
ব্যালট বাক্স থেকে আদালতের কাঠগড়া, রাজপথের তাণ্ডব এবং শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর। শেষ অব্দি গতকাল জো বাইডেন ও কমালা হ্যারিসের শপথের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো ঐক্যবব্ধ আমেরিকার।
কিন্তু এ পর্যন্ত আসতে কি না করতে হয়েছে। ইলেক্টোরাল ভোটের লাকি নাম্বার ২৭০ পৌঁছাতে গলদঘর্ম হয়ে পড়েছিল পুরো দুনিয়া। দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। মিডিয়া নির্ঘূম রাত কাটিয়েছে। আর এসবই হয়েছে ট্রাম্পের গোয়ার্তুমির জন্য। একগুঁয়েমির জন্য।
ডনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তার অভিযোগগুলোও একইভাবেই বিচারকরা খারিজ করে দিয়েছেন। শক্ত অবস্থান নিয়েছেন হুমকি-ধামকির মধ্যেও। সত্য, ন্যায়, জনরায় আর গণতন্ত্রের পথেই হেঁটেছে শেষ পর্যন্ত তাদের আদালত।
একইভাবে মিডিয়া শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেছে ট্রাম্পের মিথ্যা ভাষণ প্রচার বন্ধ করে দিয়ে। সামাজিক মাধ্যম বিশেষত ফেসবুক, টুইটার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিভ্রান্তিকর সব খবর প্রচারের বিরুদ্ধে। ট্রাম্পের একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক ও টুইটার। ট্রাম্প একের পর এক এভাবেই সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছে। তার দলের নেতারাও ধীরে ধীরে সরে গেছেন। অবস্থান নিয়েছেন গণতন্ত্রের পক্ষেই, আইনের পক্ষেই, জনরায়ের পক্ষেই।
সবশেষ ২০শে জানুয়ারি ছিল টানটান উত্তেজনার। কি হবে না হবে। এমন নানা আশঙ্কায় সকলেই ছিল শঙ্কিত। পুরো দুনিয়ার চোখ ছিল আমেরিকার দিকে। লকডাউন ছিল ওয়াশিংটন জুড়ে। তবে সব অন্ধকার কাটিয়ে ভোরের স্বচ্ছ আলো ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। চারপাশে সুবাতাস বইছে গণতন্ত্রের। আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট বাইডেন ডাক দিয়েছেন ঐক্যের।
প্রথম কার্যদিবসেই স্বাক্ষর করেছেন ১৫টি নির্বাহী আদেশে। জলবায়ু পরিবর্তনে সকলের সঙ্গে কাজের পক্ষে থাকছে আমেরিকা। এক সঙ্গে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঐক্যবব্ধভাবে কাজ করার কথা ঘোষণা করেছেন। সাতটি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বার্তা দিয়েছেন শান্তির।
অথচ গত চার বছর আমেরিকার প্রতিটি দিন ছিল টালমাটাল। নানা ইস্যুতে বিতর্কে জেরবার ছিল দেশটি। ট্রাম্প কখন কি করে বসবেন তা নিয়ে কারও কোনও ধারণাই ছিল না। সকালে এক কথা বলতেন তো বিকালে আরেক কথা। আর নির্বাচন নিয়ে যা হয়েছে তা আর বোধকরি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। যা হয়নি আমেরিকার ইতিহাসে তার রেকর্ড কম লম্বা করেননি ট্রাম্প। তবু মানুষ রসিকতা করে হলেও সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পের শুভকামনা চেয়েছেন। বিদায় বেলায় অনেকেই লিখেছেন, ‘হ্যাভ আ গুড লাইফ ট্রাম্প’।