সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ১৫ মাসের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করেছে। পদপ্রত্যাশী এসব নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় অনশন কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে বৈঠক করবেন বলে জানান এসব নেতাকর্মী। কর্মসূচিতে পদপ্রত্যাশী নেতা শেখ আল ফয়সাল, ঝলক মিয়া, মুতাছিম বিল্লাহ, ইবরাহিম খলিল ফিরোজ, শাহ আলম, জাকিউল ইসলাম শাহিন, সাইদ আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এমএম মুসা, ওয়াসিম খান মুক্ত, গাজী মোহাম্মদ হারুনুজ্জামান, রোকনুজ্জামান, শাহরিয়ার ইমন, সাজিদ হাসান, মহসীন ভুইয়া, শরিফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের বাহাউদ্দীন সোহেল, আতাউর রহমান বুলেট, মহিউদ্দিন ইকবালসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মুতাছিম বিল্লাহ বলেন, ‘সংগঠনের স্বার্থে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির দাবিতে আমরা বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন করেছি। সংগঠনের গতিশীলতা ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয় নিশ্চিত করতে দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হোক। দেশজুড়ে ছাত্রদলের চলমান বিশাল কর্মযজ্ঞে আমরাও শামিল হতে চাই, কাজ করার সুযোগ চাই। সংগঠনকে সুসংগঠিত ও গতিশীল করার মাধ্যমেই সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে রুখে দিতে সক্ষম হব।’
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় সংগঠনের ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার কারণে সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের কাছে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করলে তাতে রাজপথের অনেক পরীক্ষিত, ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীর ঠাঁই হয়নি। এতে বাদ পড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি বর্ধিত হবে- ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের এমন আশ্বাসে দলের প্রতি ভালোবাসা এবং কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমরা সংগঠন এগিয়ে নিতে এবং গতিশীলতা আনতে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বলেন, ‘সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ছাত্র সংগঠনের চলমান হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি মোকাবিলায় যেখানে সম্মিলিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন- সেখানে আমাদের কাজ করার সুযোগের জন্য দাবি করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৪ মাস মেয়াদি কমিটির প্রায় ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা আজও কোনো সাংগঠনিক পরিচয় পাইনি।’
তারা বলেন, ‘করোনাপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আমরা বারবার কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবি জানিয়ে আসছি। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২১ জানুয়ারি আমরা লিখিতভাবে আমাদের দাবি কেন্দ্রীয় সংসদের কাছে উপস্থাপন করি। কিন্তু বিশ্বাসের বিপরীতে বরাবরই আমাদের হতাশ হতে হয়েছে। এমনকি ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশনা সত্ত্বেও কোনো এক অজানা কারণে কেন্দ্রীয় সংসদ পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে না। সাংগঠনিক কোনো পরিচয় না পাওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
কর্মসূচি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. ঝলক মিয়া বলেন, ‘আমরা দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসব। সেখানে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’