ফ্ল্যাট কেনার ঋণসীমা বাড়িয়ে ২ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগে এ ঋণসীমা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন থেকে গ্রাহক ফ্ল্যাটের মোট মূল্যের ৩০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলেই মিলবে ৭০ শতাংশ ব্যাংক ঋণ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এক সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এই নীতিমালা পরিপালনের জন্য সকল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে অবহিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সাথে অনির্ধারিত বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি আবাসন খাতের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি জোড়ালোভাবে তুলে ধরেন এমডিরা। তারা জানান, ব্যাংকিং খাতের খাতভিত্তিক খেলাপি ঋণের মধ্যে অন্যতম খাত হলো আবাসন খাত। এ খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেশির ভাগই ফেরত দিতে পারছেন না। ফলে খাতভিত্তিক খেলাপি ঋণের হিসেবে আবাসন খাত এখন বড় খাত হিসেবে উঠে এসেছে। সম্ভাবনাময় সবচেয়ে শ্রমঘন আবাসন খাতের এ দুরবস্থা বেশ কয়েক বছর যাবত চলে আসছে। এদিকে আবাসন খাতের নির্মাণ ব্যয় বাড়লেও মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি।
বলতে গেলে টাকা-পয়সা ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িতদের কাছে চলে গেছে। একদিকে নির্মাণব্যয় বৃদ্ধি এরও পর আয় তুলনামূলক না বাড়ায় অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়ছে। শতভাগ রেডি ফ্লাট বিক্রি কমে যাওয়ায় যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা করছেন তাদের পক্ষে ব্যাংকের কিস্তি দেয়া বলা চলে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে আবাসন খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বেকায়দায় পড়ে গেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। অনেকেই একাধিক বাড়ির কাজ নির্মাণ করার চুক্তি করেছেন। কিন্তু ব্যাংক ঋণ ও নিজস্ব উদ্যোগে অর্ধেক কাজ শেষ করতে পেরেছেন। কিন্তু ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পারায় তাদের পক্ষে বাকি কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্প ফেলেই ব্যাংকের পরোয়ানা মাথায় নিয়ে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে। ঋণ আদায় করতে না পেরে এক পর্যায়ে ওই ঋণকে খেলাপি করা হচ্ছে। আর খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে ব্যাংকের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে।
পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষে ঋণসীমা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে অনুরোধ করা হয়। ব্যাংকারদের অনুরোধে ফ্ল্যাট কেনার ঋণসীমা বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেন গভর্নর। গতকাল গভর্নরের নির্দেশেই এ সার্কুলার জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো: রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার লেটারে বলা হয়েছে, এখন থেকে ফ্ল্যাট কেনার ঋণসীমা বাড়িয়ে ২ কোটি টাকা করা হলো। একই সাথে ঋণের অনুপাতও ৭০:৩০ পুনর্নির্ধারণ করা হয়। সার্কুলারটি পরিপালনের জন্য গতকালই তা ব্যাংকের এমডিদের কাছে পাঠানো হয়েছে।