দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বেশ কদিন ধরেই চিন্তায় আছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। ব্যাটিং-বোলিং- দুই বিভাগেই সাকিবকে পরখ করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো ম্যাচ খেলার জন্য শতভাগ ফিট হয়ে ওঠেননি বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে পুনর্বাসনের মধ্যে আছেন সাকিব। সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগে আজ এক দিন হাতে আছে। প্রস্তুতি নেওয়ার শেষ দিনে ম্যাচের জন্য পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠবেন তো সাকিব?
প্রথম টেস্টে সাকিবকে পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ডমিঙ্গো। গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে প্রিয় শিষ্য সাকিবের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সাকিব আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সে বোলিং ও ব্যাটিংয়ে বাড়তি শক্তি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সে। যে কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে তার বিকল্প পাওয়া খুবই কঠিন। শেষ ওয়ানডেতে কুঁচকির ইনজুরির পর তার প্রস্তুতি নেওয়া ততটা সহজ হয়নি। পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখনো সে শতভাগ ফিট না। তাকে দেখতে আরেকটি দিন রয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে বুধবার প্রথম টেস্টের জন্য সে ফিট হয়ে উঠবে। সে পুনর্বাসনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। নেটে কিছু বল করেছে। কিছু বল খেলেছে। তাতে অস্বস্তিবোধ করতে দেখা যায়নি।’ টেস্ট সিরিজের আগে প্রস্তুতি খুবই ভালো হয়েছে বলে জানান কোচ ডমিঙ্গো।
তার মতে, চট্টগ্রামে নিজেদের তৈরি করতে কঠোর পরিশ্রম করেছে টাইগাররা। তবে অনেক দিন পর টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ- এজন্য সিরিজ চ্যালেঞ্জিং হবে। লম্বা সময় ব্যাট করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। এটা চ্যালেঞ্জের। তবে দল যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে, তাতে আত্মবিশ্বাসী তারা। এ ফরম্যাটের ক্রিকেটে উন্নতির জায়গা রয়েছে।
এখন নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা উপহার দেওয়ার পালা। ডমিঙ্গো মনে করেন, টেস্ট দল হিসেবে গর্বিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারা ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে বড় টেস্ট ম্যাচ খেলে এসেছে। তিনি বলেন, ‘তাদেরকে যদি আমরা হালকাভাবে নিই, এটা হবে বিপদ ডেকে আনা। তাদের দলে বেশ কিছু দারুণ ক্রিকেটার রয়েছে। ব্রাথওয়েট ধারাবাহিক পারফর্মার। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচ বিশ্বমানের বোলার। আমাদের আত্মতুষ্টির কিছু নেই। আমরা জানি, যে কোনো কন্ডিশনে তারা ভয়ঙ্কর দল। তাদের বিপক্ষে ফল বের করে নিতে সেরা খেলাটাই খেলতে হবে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে চাপ নেই বলে জানান ডমিঙ্গো।
টেস্ট দল হিসেবে উন্নতির পথে রয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে রোমাঞ্চকর কিছু টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। আমি পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত-অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড-শ্রীলংকার ম্যাচ দেখেছি। আশা করি, আমরা রোমাঞ্চকর ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে পারব। খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতা হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে কিছু ভালো মানের ক্রিকেটার আছেন। আমরা পয়েন্ট তুলে নিতে চাইব। ঘরের মাঠে খেলা। হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে আমাদের শক্তি অনুযায়ী খেলব।’ আইসিসি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের অংশ বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজও। চ্যাম্পিয়নশিপে এ পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি টাইগাররা। এবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে পূর্ণ পয়েন্ট তোলার প্রত্যাশায় তারা।
বায়ো-বাবল অর্থাৎ জৈব সুরক্ষা পরিবেশের মধ্যে অনেক দিন ধরে রয়েছে দল। এ পরিবেশের মধ্যে থাকা কঠিন হলেও একটি সুবিধা দেখছেন ডমিঙ্গো। তার মতে, সবাই একসঙ্গে দীর্ঘ দিন এ পরিবেশের মধ্যে থাকায় দলের ঐক্য আরও দৃঢ় হবে। যার প্রতিফলন মাঠে দেখা যাবে। দলকে নেতৃত্ব দেবেন মুমিনুল। অধিনায়ক হিসেবে ততটা অভিজ্ঞ না হলেও ডমিঙ্গো আশা করছেন, সিনিয়র ক্রিকেটাররা মুমিনুলকে সহযোগিতা করবেন। অধিনায়ক হিসেবে দিন দিন উন্নতি করছেন মুমিনুল।
তবে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কিছু আলোচনা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন ডমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘কারা ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বরে ব্যাট করতে যাচ্ছে- এ ব্যাপারে আমি ধারণা পেয়েছি। নির্বাচকদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তামিমের সঙ্গে উদ্বোধনীতে সাইফ ও সাদমান খেলার অপশন রয়েছে।’ দলে দারুণ কিছু পেস বোলার রয়েছে বলে জানান কোচ ডমিঙ্গো। তার মতে, তাসকিনের বলে ভালো পেস রয়েছে। হাসান মাহমুদ, এবাদত, রাহীও দারুণ। তবে চট্টগ্রামের উইকেট বিবেচনায় বেশি পেসার খেলানো যাবে বলেও মনে করেন প্রধান কোচ। তিনি জানান, আগে বলেছিলেন মোস্তাফিজ টেস্টে সংগ্রাম করছে। তবে এখন মোস্তাফিজ অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু এখনো মোস্তাফিজ শতভাগ ধারাবাহিক হতে পারেনি।