পেঁয়াজ, চাল ও লবণের ‘ভূত’ এবার ময়দার ওপর চেপেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ময়দার দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়া ময়দার বস্তা এখন ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকায় ঠেকেছে। বসুন্ধরা ও এসিআই সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাদের অনুমান, জানুয়ারি মাসের আগে ময়দার কাঁচামাল উন্নতমানের গম পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ সময়ের মধ্যে ময়দার দাম আরো অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। ময়দার পাশাপাশি তেল, চিনি, ডিম ও ডালডার দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম দুরবস্থায় পড়েছেন বেকারি খাতের উদ্যোক্তারা।
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫ মণ বলে বিক্রি হওয়া ১৮০ কেজি ভোজ্যতেলের ড্রামের দাম এত দিন ছিল ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। কয়েক দিন ধরে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বাড়িয়ে পাইকারি বিক্রেতারা এক ড্রাম তেল বিক্রি করছেন ১৩ হাজার টাকা দরে। এ সময়ে ১৬ কেজির প্রতি কার্টুন ডালডার দাম বেড়েছে অন্তত ২০০ টাকা। ১০৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এখন বিক্রি করা হচ্ছে ১২৫০ টাকায়। ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চিনির দাম এত দিন ছিল ২১৫০ থেকে ২২০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ টাকা দরে। এ হিসাবে পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি চিনি ১১ থেকে ১২ টাকা, প্রতি কেজি ডালডা ১৫ থেকে ১৬ টাকা, প্রতি লিটার পামঅয়েল ১৬ থেকে ১৭ টাকা এবং প্রতি কেজি ময়দার দাম ১০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে খুচরায় বেড়েছে আরো বেশি হারে।
একসাথে সব কাঁমালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের শ্রমঘন বেকারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা চরম দুরবস্থায় পড়েছেন জানিয়ে বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির মহাসচিব আলহাজ রেজাউল হক রেজু গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। নতুন করে বেড়েছে সব কাঁচামালের দাম। এই অবস্থায় লোকসান দিয়ে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গ্রাহকদের প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। চাইলেই দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। আবার ব্যাপক কমপিটিশনের কারণে নিজ নিজ বাজার ধরে রাখারও বিষয় আছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক বেকারি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে গমের সরবরাহ যথেষ্ট থাকলেও ময়দা তৈরি করার জন্য উন্নত মানের যে গম আমদানি করা হয় এবার কানাডা থেকে আনুপাতিক হারে সে গমগুলো কম এসেছে। এ কারণে ভালো মানের ময়দা উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে দেশের দুই প্রধান ময়দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ও এসিআই বাজারে ময়দা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। বড় কোম্পানির অনুপস্থিতির সুযোগে অন্য কোম্পানিগুলো ময়দার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির আগে ময়দার উপযোগী গম আসবে না। ফলে আগামী এক মাস ময়দার দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়বে। পেঁয়াজের মতো ময়দার গমও জরুরিভিত্তিতে কার্গো বিমানে আমদানি করার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম প্রতিদিন কমছে। কিন্তু রাজধানীর খুচরা বাজারে এর প্রভাব তেমন পড়ছে না। মনিটরিং না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার এবং পাড়ার দোকানগুলোতে গতকালও দেশী পেঁয়াজ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। কাওরান বাজারে গতকাল দেশী পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। বেশি দামে কেনা হয়েছে বলে লোকসান দিতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা।
এ দিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। গত দেড় মাস ধরে সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ শীতের আগাম সবজি বাজারে বিক্রি হলেও দাম কমছে না। এর মধ্যে শুধু সিমের দাম কিছুটা কমেছে। তবে এখনো এ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বাজারে বর্তমানে শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, আধাপাকা টমেটো ১২০ টাকা, কাঁচা টেমেটো ৮০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং লাল বরবটি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতিটি বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পাতাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, শালগম ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩৫ টাকা, সবুজ বরবটি ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা ও কচুরমুখী ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।