আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন আজ শনিবার। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে। পদ্মা সেতুর আদলে মঞ্চ প্রস্তুত করে সাজানো হয়েছে। সম্মেলনের অন্যান্য সব প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো আলোচনা রয়ে গেছে যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের তকমা ঘোচাতে এবং ক্যাসিনোকাণ্ডে লণ্ডভণ্ড যুবলীগকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে কারা হাল ধরছেন?
জানা গেছে, সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযানের শুরুতে গ্রেফতার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহসভাপতি এনামুল হক আরমান গ্রেফতার হন। সংগঠন থেকে বহিষ্কার হন দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমানসহ একাধিক নেতা। নানা অপকর্মে যুবলীগের বর্তমান কমিটি বিতর্কিত হয়ে পড়ায় এবং ৫৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেয়ায় সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞদের অনেকেই বাদ পড়ছেন। সে ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ধোয়াশা তৈরি হয়েছে। কেউই বলতে পারছেন না, কারা হাল ধরছেন যুবলীগের।
সংগঠনের ভেতর থেকে নেতৃত্ব বাছাই করা হবে নাকি বাইরে থেকে ক্লিন ইমেজের কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে। তবে ভেতরে-বাইরে দুটোই আলোচনা আছে।
যুবলীগের নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যুবলীগের ছয়টি কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছে। এর মধ্যে চারটিতে চেয়ারম্যান ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার নিকটাত্মীয়রা। ফলে যুবলীগের প্রতিটা সম্মেলনেই ওই পরিবারের কেউ না কেউ আলোচনায় আসেন। এবার জোরালো আলোচনায় আছেন শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। যদিও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করা পরশ এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। এ ছাড়া যুবলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য হলেন-শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাঈম আলোচনায় রয়েছেন। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে।
যুবলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন ও মো: আনোয়ারুল ইসলামও যুবলীগের চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী আছেন। বয়স ৫৫ বছরের বেশি হলেও বর্তমান কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম ও মো: ফারুক হোসেন চেয়ারম্যান পদে জোরালো আলোচনায় আছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মনজুর আলম শাহীন, অ্যাডভোকেট মামুন অর রশীদ ও সুব্রত পাল, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম ও আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেনসহ অন্তত একডজন নেতা। সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেট, অতিথিসহ প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটি সাত বছরেরও বেশি সময় পার করেছে।
সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচন করার একমাত্র এখতিয়ার নেত্রীর। যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নেত্রী যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকব। যুবলীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন নিজেকে সৎ, যোগ্য ও দায়িত্বশীল দাবি করে বলেন, আমি দলে অনুপ্রবেশকারী নই। ছাত্রজীবন থেকে সততার সাথে রাজনীতি করে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছি। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক এবং ক্যাসিনোর সাথে কখনো নিজেকে জড়াইনি।
তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড যেমন ব্যক্তিত্ব খুঁজছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমি যোগ্য।
যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম শাহীন বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডেলিগেট, কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে ইতোমধ্যে পৌঁছেছেন।
যুবলীগের সম্মেলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগে সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস উপলক্ষে পদ্মা সেতুর আদলে মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। যুবলীগের নেতৃত্ব যুবলীগের কাউন্সিলরা ঠিক করবে। তাদের সম্মতিতেই পরবর্তী নেতৃত্ব আসবে। এখানে অবশ্যই আমাদের যিনি অভিভাবক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মূল্যবান পরামর্শ আমরা নেবো। এখানে কে নেতা হবে আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তিনি বলেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির উত্তরাধিকারকে চায় নেতা হিসেবে, সেটা অবশ্যই যুবলীগের অধিকার আছে। বয়সসীমা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৫৫ বছরের বয়সসীমা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত।