বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল ও বর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে পঞ্চম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। নির্বাচনি সহিংসতায় সৈয়দপুরে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি এ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী ছিলেন। সৈয়দপুর ছাড়াও কোথাও কোথাও ককটেল বিস্ফোরণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, আগের চার ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের মতো পঞ্চম ধাপও সংঘর্ষ ও অনিয়মমুক্ত থাকতে পারেনি। আগের চার ধাপের মতো পঞ্চম ধাপেও নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে বিজয়ী হলেও নির্বাচন বিতর্কমুক্ত থাকেনি। বস্তুত পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের সব ধাপেই ছিল সহিংসতা, জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাই, প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া, পছন্দমতো ভোট দিতে না পারাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ।
পঞ্চম ধাপে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভা নির্বাচনে গোপন বুথে ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে দেশের বেশ কয়েকটি পৌরসভায় বিরোধী দলের প্রার্থীরা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন। আমরা মনে করি, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব অনিয়ম হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে সেগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া। সামনে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।
সেই নির্বাচনে যাতে পৌরসভা নির্বাচনের মতো সহিংসতা ও অনিয়মের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। গত চার ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের মতো পঞ্চম ধাপেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অস্বাভাবিক হারে বিজয়ী হয়েছেন। এ ধাপে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা যেখানে ২৮টি পৌরসভায় বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন, সেখানে বিএনপি প্রার্থী একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি পৌরসভায় জয় পেয়েছেন।
চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা যেখানে ৫৫টির মধ্যে ৪৮টিতে জয়ী হয়েছিলেন, সেখানে একজন মাত্র বিএনপি প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। তৃতীয় ধাপে ৬৩টি পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা যেখানে ৪৬টিতে জয় পেয়েছিলেন, সেখানে বিএনপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন মাত্র তিনটি মেয়র পদে। দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৬ জনের বিপরীতে বিএনপির চারজন মেয়র নির্বাচিত হন।
আর প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভা নির্বাচনে ১৯টিতে আওয়ামী লীগ ও দুটিতে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হন। এর বাইরে অন্য পৌরসভাগুলোয় যারা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রতিটি ধাপের নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সঙ্গে অন্য দলের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানও আকাশ-পাতাল।
নির্বাচনের সার্বিক এই চিত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তার কতটা বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে না হওয়ার দায় এড়াতে পারে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বস্তুত নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং ভোট প্রদান নির্বিঘ্ন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশনকে তা-ই করতে হবে।