এ বছর একুশে বইমেলা শুরুর পর থেকে স্বাধীনতা দিবসে অর্থাৎ গত ২৬ মার্চ একটু ভিড় হয়েছিল। এর আগে-পরে এমন দৃশ্য আর দেখা যায়নি। বই বিক্রি নয় বরং দিন গুনেই সময় পার করতে হয়েছে প্রকাশকদের। হতাশায় বেশ কিছু স্টল বন্ধও হয়ে গেছে। তবে যারা টিকে আছেন সেই প্রকাশকরা এখন আছেন সামনের ছুটির দিনগুলোর অপেক্ষা করছে। তাদের আশা, আগামী শুক্র-শনি ও মেলার শেষদিন পয়লা বৈশাখ একটু হলেও মেলায় জনসমাগম বাড়বে।
তারা বলছেন, লকডাউন শুরুর পর গত দ্ইু দিন তারা ভেবেছিলেন গণপরিবহন চালু হলে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা একটু হলেও বাড়বে। কিন্তু গতকাল বুধবার মেলার ২১তম দিনে গণপরিবহন চালু থাকলেও আশানুরূপ বইপ্রেমীর সমাগম ঘটেনি। এমনিতে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মানুষ কর্মব্যস্ত থাকে। তাই ছুটির দিন ছাড়া এই সময়ে মেলায় কেউ আসতে পারবে বলে মনে হয় না। জানা গেছে, আগামী ছুটির দিন থেকে মেলা জমে উঠলে বন্ধ থাকা স্টলগুলো খুলতে পারে। প্রকাশনা সংস্থা বাঁধনের কর্ণধার শেখ শাহরুল আলম বলেন, আশা করছি শুক্রবার মেলায় লোকসমাগম হবে। তাই আমরা শুক্রবারের অপেক্ষাতেই আছি।
এদিকে মেলার এক প্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী থেকেও খরা অবস্থা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের। সেখানে দারুণ সব গবেষণাগ্রন্থ, প্রবন্ধ এবং বিষয়ভিত্তিক বই থাকলেও কেউ ঢু মারছেন না। হাতেগোনা যেসব মানুষ মেলায় আসছেন তারা কৌতুহলবশতও সেদিকে যাচ্ছেন না। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকা প্রকাশনা সংস্থা ‘মুক্তধারা’ স্টলের বিক্রয়কর্মী জয় সেন জানান, তাদের কিছু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই রয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- রামেন্দু মজুমদার রচিত ‘মাই বাংলাদেশ মাই বাংলাদেশ’, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখা ‘তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক জীবন’, সেলিনা হোসেন সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’ ও আহমদ ছফার ‘জাগ্রত বাংলাদেশ’। গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘গজেন্দ্র কুমার মিত্রের ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ ও মৈত্রেয়ী দেবীর ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’। ইতিহাস ও সংস্কৃতিকবিষয়ক বইয়ের মধ্যে রয়েছে সত্যেন সেনের ‘মহাবিদ্রোহের কাহিনী’ ও ‘মসলার যুদ্ধ’। একইভাবে এখনো পাঠক টানে অন্নদাশঙ্করের ভ্রণকাহিনী ‘পথে প্রবাসে’। এ ছাড়াও শিশু-কিশোরদের বই এবং বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু বই ভালো বিক্রি হয়।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে ‘গ্রাফিক নভেল মুজিব’ প্রকাশ করেছে। ইতিপূর্বে এই সিরিজ নিয়ে শিশুদের আগ্রহ ছিল। এবার তারা আসতে না পারায় স্টলে তেমন ভিড় দেখা যাচ্ছে না। ‘ভাষা আন্দোলন : শুরুর গল্প’ শিরোনামের বইটির অষ্টম সংস্করণ এসেছে মেলায়, যা শিশুদের উপযোগী করে রচিত। স্টলটির বিক্রয়কর্মী জানান, তারা আশাহত না হয়ে মেলার শেষ সপ্তাহে মানুষ আসবে এই অপেক্ষায় আছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নজরুল ইনস্টিটিউট, ডাক বিভাগ, শিশু একাডেমি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতেও রয়েছে গবেষণাধর্মী গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই, যা পাঠকের দৃষ্টিতে গেলে তারা সংগ্রহ করবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৯টি। আজ বৃহস্পতিবার মেলার বাইশতম দিন। এদিন মেলা চলবে বেলা ১২টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত।