ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় প্রথম রায় ঘোষণা করা হলো আজ। এই মামলায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও এক বছর জেল দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। এটি বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া কোনো মামলার প্রথম রায়। এই আইনে বেশ কিছু মামলা হলেও আজ পর্যন্ত একটি মামলার রায় ঘোষণা এল।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের মামা সৈয়দ সেলিম ও ছোট ভাই রাসেদুল হাসান রায়হান। এজন্য মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে ধন্যবাদ জানান তারা।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, আমি তাকে (ওসি মোয়াজ্জেম) বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছি, এটাই আমার সফলতা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের থানাগুলোতে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের জমিদার মনে করেন, জমিদারের মতো আচরণ করেন, তাদের জন্য এই রায় অশনিসংকেত।
রায়কে মাইলফলক আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন, ওসিদের কাছ থেকে জমিদারের মতো আচরণ মানায় না।
‘রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ওসি মোয়াজ্জেম তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। যে কারণে তাকে এই মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে।’
তিনটি ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। একটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি বলে জানান ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেন, তবে রায় বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। বেলা ২টা ১৭ মিনিটে ওসি মোয়াজ্জেমকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এর পর রায় পড়া শুরু করেন আদালত।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় ওসি মোয়াজ্জেমের পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ দুই ধারায় মোট আট বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ অর্থদণ্ড হয় ওসি মোয়াজ্জেমের। একটি সাজার পর অন্য সাজা কার্যকর হবে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড নির্ধারণ হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওসি মোয়াজ্জেমকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে নেয়া হয়। ২০ নভেম্বর মামলাটিতে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়েছিল।
১৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ওই দিন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।