আমেরিকার গোয়েন্দাদের ফাঁদে আবারও পা দিলেন এক বাংলাদেশি যুবক। বখাটেপনা করতে গিয়ে কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। আর এর জের ধরে জঙ্গি হামলা করার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। ওই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণের নাম সালমান রশীদ (২৩)। তিনি ফ্লোরিডায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
২৫ নভেম্বর আদালতে হাজির করার পর পুলিশ ও সালমানের বক্তব্য থেকে এমন কথাই জানা গেছে। সালমান এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওই তরুণীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পর তিনি তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এর জের ধরে একাধিক কলেজ থেকে বহিষ্কার হন তিনি। এরপরই তিনি ক্ষুব্ধ সালমান জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা আঁটেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই মামলায় তাঁর ২০ বছরের কারাদ- হতে পারে।
গোয়েন্দারা অভিযোগ করছেন, দুই কলেজের ডিনকে বোমা মেরে হত্যাসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ষড়যন্ত্র করছিলেন সালমান। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কামরুল হাসানের ছেলে সালমান পরিবারের সঙ্গে ফ্লোরিডায় থাকেন। সালমানের জন্ম কিশোরগঞ্জে। মায়ামির একটি মসজিদে যাতায়াত করেছেন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের জন্য। শনি ও রোববার ওই মাদ্রাসায় যেতেন তিনি।
সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের প্রসিকিউটর মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গত বছরের নভেম্বরে মায়ামি ডেড কলেজের এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন সালমান। একপর্যায়ে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে তাকে ওই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর সালমান ভর্তি হন পাশের ব্রাওয়ার্ড কলেজে। সেই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও একই অভিযোগ পেশ করেন ওই ছাত্রী। এরপর সেই কলেজ থেকেও সালমানকে বহিষ্কার করা হয়। গত ডিসেম্বরে সালমানকে মায়ামি ড্যাড কলেজ থেকে এবং চলতি বছরের মে মাসে ব্রাউয়ার্ড কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দুই কলেজ থেকে বহিষ্কারের পরও সালমান ছাত্রীটিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ছাত্রীটি সালমানের তৎপরতাকে নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিযোগ আনেন।
এরই মধ্যে সালমানের পুরোনো একটি ফেসবুক পোস্টের খোঁজ পেয়ে সালমানের পেছনে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়। ফেসবুকে সালমান স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের নিগৃহীত করার প্রতিশোধ নিতে আমেরিকায় বড় ধরনের কিছু একটা করতে তিনি আগ্রহী। সালমানের ফেসবুকের স্ট্যাটাস ধরে ছদ্মবেশী এফবিআই কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। সে সময়ে সালমান জানান, মায়ামিতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের একজন দক্ষ ব্রাদারকে খুঁজছেন। সালমান তাদের (আইএস মনোভাবাপন্ন মনে করে এফবিআইয়ের এজেন্টকে) জানান, দুই কলেজের ডিন হচ্ছেন তাঁর টার্গেট, যারা তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছেন। দুই ডিনের নামও দেন সালমান। এরা দুজনই ইসলামকে ঘৃণা করে। এরা দুজন যদি মারা যায় এবং যারা তাদের হত্যা করবে, তারা অবশ্যই আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবেন। এ জন্যই এদের মারতে হবে।’
সালমান উল্লেখ করেন, এরা দুজন শুধু তার দুশমন নন, ইসলাম এবং আল্লার দুশমন।
ছদ্মবেশী এফবিআই এজেন্টকে সালমান হামলার জন্য ভালো সময়ের কথাও বলে দিয়েছেন। যখন নিরাপত্তা রক্ষার অবস্থান খুবই দুর্বল হয়, তখনই হামলার উত্তম সময় বলেও উল্লেখ করেন সালমান। দুজনকে হত্যার সময় আরও বেশি মানুষ নিহত হলেও ক্ষতি নেই, কারণ ওরা ইসলামের শত্রুÍমনে করেন সালমান।
জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে আমেরিকায় একের পর এক বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এরই মধ্যে গ্রেপ্তারের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত জুলাইয়ে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বসবাসরত দেলোয়ার মোহাম্মদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে এফবিআই। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমেরিকান সৈন্যদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এর কিছুদিন আগে জঙ্গিবাদী চিন্তা ও হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আশিকুল আলম নামে ২২ বছরের এক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী। আশিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি টাইমস স্কয়ারে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।
আশিক গ্রেপ্তারের ঘটনার আগে আকায়েদ উল্লাহ ও নাফিসসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল এফবিআই। আটক ব্যক্তিদের পরিচয় আমেরিকার প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশি আমেরিকান বলা হচ্ছে। আর এ নিয়ে বাংলাদেশি আমেরিকানদের অস্বস্তি দেখা গেলেও কেউ কিছু করছেন না। নানা সংগঠন ও সভা-সমিতির ভাঙন নিয়ে আর নিজেদের উপস্থাপনের উলঙ্গ প্রতিযোগিতা ছাড়া কমিউনিটির অপবাদ মোকাবিলায় কোন সোচ্চার ভূমিকা নিতে কাউকে দেখা যায় না।
নিউইয়র্কে সন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে সক্রিয় বাংলাদেশি ইমাম কাজী কাইয়্যুম উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনার পর বাংলাদেশের নাম যখন সংবাদে উচ্চারিত হয়, তখন আমরা লজ্জিত হই। নিন্দা জানাই।’
কাজী কাইয়্যুম বলেন, আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি জনসমাজ সম্মিলিতভাবে সন্ত্রাসীদের মদদদাতা ও উর্বরতার জোগানদাতা ধর্মাশ্রয়ী গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে না পারলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে। এ নিয়ে কমিউনিটিকে আর বসে না থেকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এসব হোমগ্রোন জঙ্গিবাদের জন্য অভিযুক্তরা পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসে বহু বাংলাদেশি পরিবার নিশ্চিহ্ন হচ্ছে এসবে জড়িয়ে।
ইমাম কাজী বলেন, ‘সামাজিকভাবে কমিউনিটিকে এগিয়ে না আসলে এমন লজ্জা ও হয়রানির মুখোমুখি আমাদের বারবার পড়তে হবে।’