যৌবনের একটি অবাঞ্ছিত সমস্যার নাম ব্রণ। সুন্দর মুখশ্রীর ওপর ব্রণ যদি জাপটে ধরে, তাহলে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, কারোরই মনে যন্ত্রণার কমতি থাকে না। লিখেছেন ডা: দিদারুল আহসান
১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সে ব্রণ বেশি হয়। তবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত এটি হতে দেখা যায়। টিনএজারদের মধ্যে ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রেই কম অথবা বেশি এটি হয়ে থাকে। ২০ বছর বয়সের পর থেকে এটি কমতে থাকে।
শরীরের কোথায় হয়
সাধারণত মুখে; যেমন গাল, নাক, থুতনি ও কপালে হতে দেখা যায়। তবে শরীরের ওপরের অংশে ও হাতের ওপরের অংশেও হরহামেশাই হতে দেখা যায়।
ব্রণ হওয়ার কারণ
বংশগত প্রভাব এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। স্বাভাবিকভাবেই লোমের গোড়ায় একটি ব্যাকটেরিয়া থাকে, যার নাম প্রোপাওনি ব্যাকটেরিয়াম একনি। বয়ঃসন্ধিকালে এড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবামের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই সেবাম থেকে ফ্রি ফ্যাটি এসিড তৈরি করে লোমের গোড়ার উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া। ফলে লোমের গোড়ায় প্রদাহের সৃষ্টি হয় এই ফ্যাটি এসিডের প্রভাবে। এর পাশাপাশি জমা হয় লোমের গোড়ায় কেরাটিন নামক পদার্থ। ফলে সেবাসিয়াস গ্রন্থিপথ বন্ধ হতে থাকে এই কেরাটিন, লিপিড আর মেলানিন পদার্থ দিয়ে যা ব্ল্যাক হেড বা ‘হোয়াইট হেড’ হিসেবে দেখা দিয়ে থাকে।
ব্রণের সাথে খাওয়ার সম্পর্ক
অনেকের ধারণা, তৈলাক্ত খাবার খেলে বুঝি ব্রণ হয়। সত্যিকার অর্থে কথাটি সত্য নয়। খাওয়ার সাথে ব্রণের কোনো সম্পর্ক আছে বলে জানা যায় না।
ব্রণ ও ক্রিম
যেসব ক্রিমে তৈলাক্ত উপাদান থাকে, সেসব ক্রিম যাদের মুখে বেশি ব্রণ হয় তাদের ব্যবহার করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, ক্রিম যদি তৈলাক্ত হয় তবে তা ব্রণের রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
চিকিৎসাপদ্ধতি
রোগীর আক্রান্তের গুরুত্ব বিবেচনা করে চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করতে হয়। তা হতে পারে মলম থেকে শুরু করে খাওয়ার জন্য নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক অথবা রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ।
ব্যাকটেরিয়া নাশক
অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে টেট্রাসাইক্লিন ১৯৫১ সাল থেকেই ব্রণ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। টেট্রাসাইক্লিন দামে সস্তা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং অত্যন্ত কার্যকর। এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্রণ সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে দমন করে। তবে সমস্যা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে কয়েক মাস ধরে এই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যেতে হয়। এর দ্রুত কোনো উন্নতি দেখা যায় না। সাধারণভাবে এই ওষুধ খাওয়ার এক থেকে দেড় মাস পর উন্নতি লক্ষ করা যায়। আর একটি ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে মিনোসাইক্লিন। মিনোসাইক্লিন টেট্রাসাইক্লি¬নের চেয়েও অধিক কার্যকর। দেখা গেছে, ৫০০ মিলিগ্রাম টেট্রাসাইক্লিনের চেয়ে ১০০ মিলিগ্রাম মিনোসাইক্লিন আরো বেশি কার্যকর।
ডক্সিসাইক্লিন
ব্রণ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ডক্সিসাইক্লিন একটি চমৎকার ওষুধ। এরিথ্রোমাইসিন খেয়ে যদি ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্ট হয় সে থেকে ডক্সিসাইক্লি¬ন একটি অত্যন্ত কার্যকর ওষুধ।
এরিথ্রোমাইসিন বা ক্লি¬নডামাইসিন
গর্ভবতী মহিলারা যখন টেট্রাসাইক্লিন খেতে পারে না, তখন এরিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্লিনডামাইসিনও অন্য ওষুধের মতো একটি কার্যকর ওষুধ।
হরমোন থেরাপি
মহিলাদের ক্ষেত্রে সেবামের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যদি ওভারি থেকে এন্ডোজেন হরমোন তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে কম ডোজের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি মুখে খাওয়া যাবে যাতে থাকতে হবে নন-এন্ডোজেন প্রজেসটিন যা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ধরনের হরমোন চিকিৎসাপদ্ধতি কোনো অবস্থায়ই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেয়া যাবে না।
স্লাইরোনোল্যাকটন
এন্টি-এন্ডো-জেনিক উপাদান; যেমন স্লাইরোনোল্যাকটন সেবাম উৎপাদন কমিয়ে দিতে সক্ষম। ফলে এটি মহিলাদের ব্রণের ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ওষুধ। তবে এটিও কোনো অবস্থায়ই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
আইসোট্রিটিনয়েন
আইসোট্রিটিনয়েন আবিষ্কারের ফলে ব্রণ চিকিৎসায় ভিটামিন এ-এর ব্যবহার এখন একটি ঐতিহাসিক সফলতার দাবিদার।
যেকোনো ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রেই এর ব্যবহারে সফলতা আসে। তবে দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহার করা হয় না। মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে ব্যাপক সতর্কতা প্রয়োজন। কেননা শিশুর ওপর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি একদমই ব্যবহার করা যাবে না।
অপারেশনপদ্ধতি
ব্রণের কমিডোন (কালো দাগ) পাকা ব্রণ ও সিস্ট-জাতীয় ব্রণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কার্যকর। স্কালপেল দুই নম্বর ব্লেডের সাহায্যে এই ছোট অপারেশনটি করতে হয় এবং কমিডো এক্সট্রাক্টরের সাহায্যে ব্রণ বা কমিডোনের উপাদান বের করে দেয়া হয় এবং এতে দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক : অধ্যাপক ও অ্যালার্জি ও অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ, দ্য অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার, ৪৩ আর/৫সি পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা। ফোন : ০১৭২১৮৬৮৬০৬