ভাবা যায়, এক বোতল শ্যাম্পুর দাম আড়াই লাখ আর এক প্যাকেট কফির দাম এক লাখ ওন! এমনটাই হয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। কোভিড-১৯ মহামারির দাপটে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত উত্তর কোরিয়া। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল দেশের সাধারণ মানুষ। সেখানে এক বোতল শ্যাম্পুর দাম কোরীয় মুদ্রায় আড়াই লাখ আর এক প্যাকেট কফির দাম এক লাখ ওন (উ. কোরিয়ার মুদ্রা)।
দেশটির শীর্ষস্থানীয় নেতা কিম জং উন এ অবস্থায় তার দেশের জনগণকে খাবার খাওয়াতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এমনটাই বলছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী পিয়ংইয়ংয়েই সয়াবিন, চিনি, আটাসহ নানা দ্রব্যের মূল্য সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এক প্যাকেট কফির দাম স্থানীয় মুদ্রায় এক লাখ ১৩ ওন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার টাকা)। ব্ল্যাক টি-র একটা ছোট প্যাকেটের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার ওন (প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা)। এক কেজি কলা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার ওন (প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা)। এক বোতল শ্যাম্পু কিনতে হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ ওন দিয়ে (প্রায় ১৬ হাজার টাকা)।
পিয়ংইয়ংয়ের একজন বাসিন্দা জানান, ওখানকার টঙ্গিল বাজার থেকে আলু কিনতে হচ্ছে তিনগুণ দামে। অর্থাৎ গত বছর যে আলুর কেজি ছিল প্রায় আড়াই হাজার ওন, বর্তমানে সেই আলু কিনতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ওনে (প্রায় ৫ হাজার টাকা)।
সাত দিন আগেও এক রাজনৈতিক সভায় মতবিনিময়কালে কিম বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। খাদ্য সরবরাহের উৎস সংকুচিত হচ্ছে দিনদিন।’ খাদ্য সংকট নিয়ে উদ্বেগের কথা জানালেও কী পরিমাণ খাদ্য ঘাটতিতে রয়েছে তার দেশ, তা তিনি বলেননি।
কিন্তু তার আগেই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) জানায়, দেশটিতে আট লাখ ৬০ হাজার টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে, যা দিয়ে সর্বোচ্চ আর দুই মাস চলতে পারবে উত্তর কোরিয়া। ২০২০-২১ এর শীতে এই সংকটের সূত্রপাত। করোনা অতিমারির জেরে বাইরে থেকে খাদ্যপণ্যের আমদানি কমে যায়। পরমাণু অস্ত্র ও নিত্যনতুন ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত রাখা দেশটিকে সারের জন্য চীনের ওপর নির্ভর করতে হয়।
এখনো দুর্ভিক্ষ শুরু না হলেও আরেকটি ঘূর্ণিঝড় হলেই দেশটিতে খাদ্য সংকট চরম অবস্থায় পৌঁছাবে। তবে এখনো পরিস্থিতি যথেষ্ট সংকটজনক। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার নির্ধারিত শহর ও শহরতলির দোকানগুলো আরও বাড়িয়েছে যেন মূল্য বেশি হলেও তা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে না-হয়। দোকানগুলোতে চাল ও ভুট্টার পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবারও সরবরাহ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে রাজ্য কর্মকর্তারা সংকটের কারণে খাদ্য সরবরাহে সমতা ধরে রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।