শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
চিন্ময় কৃষ্ণসহ ইসকনসংশ্লিষ্ট ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় ৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত লেবাননে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, গুলিবর্ষণ ইসরাইলের সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান হলেই নির্বাচন হবে : মাহফুজ আলম কারিকুলামে যুক্ত হচ্ছে জুলাই-আগস্টের স্মৃতি কলকাতায় বাংলাদেশি কনস্যুলেট ঘেরাওয়ের চেষ্টা, সংঘর্ষে আহত পুলিশ চলমান অস্থিরতার পেছনে ‘উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন’ দেখছে সেনাবাহিনী জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির বিচারপতিকে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ ইসরাইলের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা হিজবুল্লাহর

ওয়ান-ইলেভেনের বিভক্তি: সেই ফাটলে জোড়া লাগেনি বিএনপির

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১
  • ১১৮ বার

ওয়ান-ইলেভেনের বিভক্তির বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হলে তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দলে সংস্কারের প্রস্তাব আনেন। ওই প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিএনপিতে বিভক্তি দেখা দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ওয়ান-ইলেভেনে সৃষ্ট ক্ষত গত ১৪ বছরেও ঘোচেনি দলটির।

ওই সময়ের দ্বন্দ্ব কাটিয়ে মূলধারায় ফিরে আসেন সংস্কারপন্থিদের অনেকেই। কিন্তু তাদের কেউ কেউ দলের মূল নেতা হিসেবে খালেদা জিয়াকে মানলেও তারেক রহমানকে মানতে পারেননি। এই কারণেই বিভক্তি কোনোভাবেই দূর করতে পারছে না দলটি। এ অবস্থায় দলে একজন ‘কান্ট্রি চেয়ারম্যান’ নিয়োগ করতে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে তখনো কান্ট্রি চেয়ারম্যান বা দেশীয় সমন্বয়ক করার গুঞ্জন উঠেছিল। তখন তারেক রহমানের উপস্থিতিতে ভার্চুয়াল এক সভায় কুমিল্লার এক নেতা দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতার নাম প্রস্তাব করেছিলেন।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, দলের অনৈক্যের মাঝে ক্ষমতাসীনদের নানা নির্যাতন, মামলা, গ্রেপ্তার চলছে। এ অবস্থায় বিএনপি সঠিক রাজনৈতিক লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ করতে পারছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর মূল কারণ দলে গণতান্ত্রিক চর্চার অনুপস্থিতি। বিএনপিতে সত্যিকার গণতন্ত্র চর্চা এবং নেতাদের বিভেদ দূর করা না গেলে সংকট থেকে বেরিয়ে আসা দলটির জন্য কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যান। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত ছিল- তার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে কাক্সিক্ষত কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। তার মুক্তি ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া সাময়িক মুক্তি পেলেও শর্তের কারণে রাজনীতিতে তার কোনো ভূমিকা নেই।

বিএনপি নেতারা জানান, চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর দলের স্থায়ী কমিটির সভায় যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে সব সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় নেতারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তারেক রহমানের ওপর ছেড়ে দেন। এর পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার সিদ্ধান্ত দিলে তা নিয়েও দলের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়।

দলের একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর কিছু নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বা কান্ট্রি চেয়াম্যান হতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। বিভিন্নভাবে চেষ্টাও করেছিলেন। চাওয়া পূরণ না হওয়ায় ওই নেতারা ক্ষুব্ধ। তারাই তারেক রহমানের কাজের সমালোচনা করছেন। দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের কমিটি গঠন বিষয়ে। এসব কমিটি গঠনে সিনিয়র নেতাদের মতামত অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়েছে। আবার কমিটি গঠনে অঙ্গসংগঠনের নেতাদের ‘কমিটি বাণিজ্য’ নিয়ে অভিযোগ উঠলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে তারেক রহমানের ওপর।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে গুঞ্জন ছিল ওয়ান-ইলেভেন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা তারেক রহমানকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তাকে বাদ দিয়েই দলের একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেবে। তখন তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে দলের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় ভোট বর্জন বা নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও করতে শীর্ষনেতাদের পরামর্শ দেন। কিন্তু দলীয় প্রার্থীদের বার্তা দেওয়া হয়- সরকারে না গেলেও ৭০/৮০ আসন নিয়ে বিরোধী দলে থাকছে বিএনপি। বিরোধী দলে গেলে কে কে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। ওই সময় সিনিয়র তিন নেতার নামও বাতাসে ভাসতে থাকে। এদের মধ্যে একজন প্রয়াত হয়েছেন। বাকি দুজনকেও নেতাকর্মীরা সরকারের লোক হিসেবে দলে প্রচার শুরু করে। গতকাল শনিবার যুবদলের এক নেতা বলেন, ওই দুই নেতার কথা সবাই জানেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উনাদের কথামতোই দল পরিচালনা করছেন। এদের সাথে কিছু সাবেক ছাত্রনেতাও রয়েছেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। প্রতিবাদে রাজপথে কোনো কর্মসূচি পালন না করে পরে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিতরা সংসদে যোগ দেন। সে সময়ও গুঞ্জন ছিল- সংসদে যোগ না দিলে দলের এই নেতাদের নেতৃত্বে আরেকটি বিএনপি করা হবে। বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়া নিয়ে তখন দলে ও জোটের নেতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

দলের নেতারা জানান, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ও ২০ দলীয় জোটকে কম গুরুত্ব দেওয়া নিয়েও সমালোচনায় পড়েন তারেক রহমান। আবার নির্বাচনের ফল শূন্য হওয়ায় খালেদা জিয়াও ড. কামাল হোসেনকে জাতীয় নেতা বানিয়ে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোর সঙ্গ নিয়েও বিএনপিতে ক্ষোভ রয়েছে। এ ইস্যুতে দল বিভক্ত।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপিতে বিভক্তির কোনো সুযোগ নেই। তবে নেতাদের ব্যক্তিগত রেষারেষি ও ঈর্ষা পরিহার করা উচিত। ওপরে ওপরে লোক দেখানো ঐক্য দেখালে চলবে না, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার মাধ্যমে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। সে চেষ্টা আমাদের সবার করতে হবে। এটা আমাদের সবাইকে বুঝতেও হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com