শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

ঋণের বিকল্প খুঁজতে হবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৩৬ বার

ব্যাংক খাত হচ্ছে বেসরকারি খাতের ঋণের জন্য প্রধান উৎস। কিন্তু ক’বছর ধরে বাংলাদেশে আলোচনা চলছে দেশের ব্যাংক খাত থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছে না বেসরকারি খাত। এই প্রবণতা থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি। কারণ বর্তমান সরকার অনেকসময় অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ব্যাংক খাতের ওপর।
সম্প্রতি নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বেসরকারি খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। তবে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সরকারের ঋণ। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাসে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৪৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯২ শতাংশ। যেখানে পুরো বছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের অতিরিক্ত মাত্রায় ঋণ নেয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণে চাপ বেড়েছে। আর বেসরকারি খাতে ঋণ সঙ্কোচনের অন্য অর্থ হলোÑ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধীরগতি সৃষ্টি হওয়া।
এর প্রভাবেই কি আমরা সম্প্রতি অর্থনীতির সব সূচকই নি¤œমুখী হতে দেখছি? গতকাল সহযোগী এক দৈনিকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ একটি বাদে অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে এখন নি¤œমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রফতানি আয়ে কোনো প্রবৃদ্ধিই নেই, আমদানিতেও একই অবস্থা। রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতি। দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে নতুন আইন করার পরও ভ্যাট আদায় মোটেই বাড়েনি। একমাত্র স্বস্তির সূচক প্রবাসী আয়। এ ছাড়া অর্থনীতির আর কোনো সূচকেই ভালো নেই দেশের অর্থনীতি। এর মধ্যে আরো খারাপ খবর হচ্ছে, আয় কম থাকায় সরকারের ঋণপ্রবণতা বাড়ছে। বেসরকারি বিনিয়োগে চলছে বহু বছর ধরে স্থবিরতা। চলতি অর্থবছরে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ নেয়ার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। এর প্রভাবে মূলধন যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে কম। নিষ্পত্তিও কম। বরং ভালো অবস্থায় আছেন কেবল ঋণখেলাপিরা। সুযোগ-সুবিধা পেয়েই যাচ্ছেন, কিন্তু বিনিয়োগে এর প্রভাব নেই। অন্য দিকে, শেয়ারবাজার তো দীর্ঘ দিন ধরেই পতনের ধারায়।
এ দিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। কিন্তু গত অক্টোবর পর্যন্ত তা অর্জন সম্ভব হয়েছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে ব্যাংকাররা জানিয়েছেনÑ বেশির ভাগ ব্যাংকেই এখন টাকার সঙ্কট রয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দেয়া হচ্ছে না। এমনকি চলতি মূলধনও চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেয়া হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হলো আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। কাক্সিক্ষত হারে আমানত না পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনায় একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের বাড়তি ঋণের জোগান দিতে হচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ পাওয়ার ওপর চাপ বাড়ছে।
এখন বেসরকারি খাত থেকে সরকারের মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেয়ার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ আরো কমে যাবে। এর ফলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব বেড়ে যেতে পারে। এই উপলব্ধি মাথায় রেখে সরকারকে এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com