মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১
  • ১৯২ বার

গত ঈদগুলোয় বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে করোনার তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। ঢাকা শহরকেন্দ্রিক করোনা ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তৃতি থাকলেও রাজধানীর বাইরে এটি ছিল অচেনা এক রোগ। অনেকে বিশ্বাসই করতে চাইতেন না; করোনা বলতে কিছু আছে, কেউ কেউ বলতেন; এটি ঢাকা শহরের রোগ। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ঢাকার বাইরে করোনা ভাইরাসের থাবা এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে লাশের বোঝা টানতে টানতে ব্যস্ত অনেক পরিবার। সীমান্ত জেলাগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় ধরন ডেল্টার বিস্তৃতিতে সারাদেশের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় বছর ঘুরে আবার এলো ঈদুল আজহা। কিন্তু ঈদে অনেক পরিবারের মাঝে নেই আনন্দ, বরং স্বজন হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছে।

এর পরও আতঙ্ক ও শোকের মধ্যে পশু কোরবানিকে কেন্দ্র কারও কারও মাঝে ঈদুল আজহার উৎসব তৈরি হয়েছে। করোনার এ সময় ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। ঈদের সময় প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থাকতে ঘরমুখী মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। ঢাকামুখী মানুষের স্রোতে প্রায় সব মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।

এবার ঈদগাহে জামাত হচ্ছে না। কোরবানির হাটেও ভিড়বাট্টা কম। মহামারীর এই কালে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। এমনি ভিন্ন আবহে আগামীকাল বুধবার ১০ জিলহজ উদযাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা। আমাদের দেশে এ ঈদ কোরবানির ঈদ নামেই পরিচিত।

এপ্রিল থেকে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধের মধ্যে আছে দেশ। ১ জুলাই থেকে ৮ দিনের বিরতির আগে টানা ১৪ দিন কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। এতে সংক্রমণ কমে আসার লক্ষণের মধ্যে শিথিল করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা আরও কঠোর বিধিনিষেধের পরামর্শ দিলেও ঈদের জন্য শিথিলতা আনা হয়। এতে ঈদের পর করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সবাই। অবশ্য আগামী ২৩ জুলাই থেকে ফের ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হবে। তবে এবারও করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে এ ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কোরবানির পশু কেনা, তার যত্ন-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ। কিন্তু এবার সেই আমেজ নেই। প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই দুই শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। ঢাকার বাইরে তো প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন মানুষ। অক্সিজেন সংকট ও আইসিইউর সংকটেও মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত এই বিশাল সংখ্যক মানুষ যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কিংবা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তার কাছে ঈদের চেয়ে জীবনের মূল্যটাই বেশি।

এবার কোরবানির পশুর হাট বসেছে কম। গতকাল পর্যন্ত সেভাবে বেচাকেনা জমে ওঠেনি। হাটে কোরবানির পশু থাকলেও বিক্রিও কম। কারণ করোনার আঘাতে মানুষের সামর্থ্যকে ছেঁটে ফেলেছে। কর্মহীন করে দিয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। আবার কর্ম থাকলেও বেতন নেই কিংবা অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন। কর্মজীবী এ মানুষদের তো এই বেতনে জীবন চালানো দায়, সেখানে কীভাবে ঈদে পশু কোরবানি করবেন তারা?

ঈদুল আজহা আসে আত্মত্যাগের মহিমা নিয়ে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক নর-নারীর জন্য এই ঈদে পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আমাদের দেশে গরু ও ছাগলই কোরবানি করা হয় বেশি। অল্প কিছু মহিষ, ভেড়া, উট-দুম্বাও কোরবানি করা হয়। ধর্মীয় বিধান অনুসারে ঈদের দুই দিন পর অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজ তারিখেও কোরবানি করা যায়।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।

কোরবানির ইতিহাস : হজরত ইব্রাহিম (আ) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির জন্য মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পেয়েছিলেন। নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তার কেউ নেই। ইব্রাহিম (আ) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ) আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পালন করতে বলেন। কোরবানি করতে উদ্যত হজরত ইব্রাহিম (আ) পুত্রস্নেহে যেন হৃদয় দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি চোখ বেঁধে নিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহতায়ালার অপার কুদরতে এ সময় হজরত ইসমাইরেল (আ) পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়।

১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কোরবানি করার বিধান রয়েছে। পশু কোরবানি দেওয়া হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য।

এই ঈদে পশু কোরবানিই প্রধান ইবাদত। ঈদের জামাত আদায় করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কোরবানির জন্য। ঈদের জামাতে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে।

ঈদের জামাত : রাজধানীতে এবার জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে ৫টি ঈদ জামাত। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। এর পর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com