“বন্ধুর পরিচয় শুধুই বন্ধু, তার বর্তমান অবস্থান নয়” এই মনোভাব নিয়ে, কাছে আসা পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে ২৫ জুলাই রবিবার, নিউইয়র্কের ভ্যালি স্ট্রীম স্টেটপার্কের সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশে এক গেট-টুগেদার অনুষ্ঠানে জড় হয় এসএসসি ৮৯-এইস এস সি ৯১ ব্যাচের বাংলাদেশী আমেরিকান বন্ধুরা। মাত্র দু‘বছর আগে প্রতিষ্ঠিত অনলাইন ভিত্তিক বন্ধু সংগঠন SSC-89 | HSC-91 বাংলাদেশে অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে, যার সদস্যসংখ্যা ১০,০০০ এরও বেশী।বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা এবং প্রবাসে থাকা বন্ধুদের মাঝে এই সংগঠন ইতোমধ্যেই বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাংলাদেশসহ মোট ৪৪ টি দেশ থেকে বন্ধুরা একটি প্লাটফর্মে মিলিত হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরা একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছে , বিপদে আপদে সহযোগিতা করছে, গড়ে তুলেছে মজবুত সম্পর্কের সেতুবন্ধন। ব্যাচভিত্তিক এই গ্রুপের ২০২০এর কিছু সফল কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হল- মোট ১,৫০,০০০ টাকার ১০ টি মেরিট এবং নিড বেজ্ড “হোপ ২০২০” স্কলারশীপ প্রদান, শীতবস্ত্র প্রদান, গ্রুপ এডমিন ড: সিরাজের টিকাদান কর্মসূচী, দেশীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টি ধরে রাখার জন্য অনলাইন বেজড ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান এবং বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেগুলো বন্ধুদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সংগঠনের বন্ধুরা কিছু প্রয়াত বন্ধুদের পরিবারকে মাসিক সাপোর্ট ছাড়াও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গ্রুপটি সচল হবার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বন্ধুদের, সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী ব্যাচমেট বন্ধুদের মন কেড়ে নিয়েছে। তারই সূত্র ধরে সংগঠনের আমেরিকায় বসবাসরত বন্ধুরা মিলে আয়োজন করে এই মিলন মেলার। আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে বন্ধুরা ও তাদের পরিবার মিলে প্রায় দুইশত মানুষ এই মিলন মেলায় যোগ দেয়। সাউথ ক্যারোলিনা থেকে গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা ড: মাহমুদুন্নবী বসুনিয়া (সজল) সহ প্যানিসিলভ্যানিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, কানেকটিকাট, জর্জিয়া থেকেও এই বন্ধু মেলায় যোগ দেয়। উপস্থিত সকলে যেনো সারাদিনের জন্য হারিয়ে যায় সেই হাইস্কুল-কলেজ জীবনে। অনুষ্ঠানটির মূল পরিকল্পনায় ছিল শাহিদ হাসান। এছাড়াও সফল করতে, পরিকল্পনা এবং পরিচালনায় যারা এগিয়ে এসেছে, তারা হল অনামিকা, তরিকুল মিঠু, আইরিন মীর, আবদুর রহমান, আফরোজা, জয়, মাসুদ, ড: মুন্সী মরতুজা, মুকুল, মুন্নী, রওশন, জয়, লিখন, সজল প্রমুখ।মোটামুটি সমবয়সী এবং একই ব্যাচের হওয়ায় অতি অল্পসময়ের মধ্যেই এদিন সবাই একে অপরের কাছাকাছি চলে আসে, গড়ে উঠে নিবীড় সম্পর্ক।এ যেনো আজীবনের বন্ধুত্ব, অতি আপন জন। বোঝার উপায় ছিলোনা যে উপস্থিত বেশীরভাগই কেউ কারো পূর্ব পরিচিত না।
সকাল নয়টায় পর থেকে বন্ধুদের মাঝে SSC-৮৯ | HSC-৯১ এর লোগো দেয়া কফি মাগ এবং টি শার্ট, ও ব্যাজ বিতরনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সকাল ১০ টায় দেয়া হয় সকালের নাস্তা। এরপর শুরু হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দৌড় সহ নানান রকমের খেলাধুলা। বড়দের জন্যও ছিলো দৌড়, হাড়িভাঙা, বালিশ যুদ্ধ সহ মজার মজার খেলাধুলার আয়োজন। উপস্থিত সকল বন্ধু তাদের নিজ নিজ বয়স ভুলে মুহুর্তে যেনো শৈশবে ফিরে যায়। হৈচৈ, ফটোসেশন, হাসি আনন্দ আর আড্ডায় মেতে ওঠে সবাই। দুপুরে দেয়া হয় বাঙালি ধাঁচের খাবার। ভুরিভোজে তৃপ্ত হয়ে আবার জমে ওঠে দেশীয় সংগীত ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।সবশেষে ছিলো আকর্ষণীয় রাফেল ড্র। আমেরিকার কর্মব্যস্ত জীবনে এরকম নির্মল আনন্দ মেলায় অংশ নিতে পেরে উপস্থিত সকলেই সন্তোষ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান যে, একই ব্যাচের বন্ধুদের মাঝে পারস্পারিক যোগাযোগ, সহযোগিতা ও পাশে থাকার জন্যই তাদের এই প্রচেষ্টা। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বন্ধুদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দৃঢ় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে তারা আশা প্রকাশ করেন।এস এস সি ৮৯ এবং এইচ এস সি ৯১ এর বন্ধুরা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক হাজার ইউ এস ডলার উঠায়, যা বাংলাদেশে গ্রুপ এডমিন ড: সিরাজের কাছে শীঘ্রই হস্তান্তরিত করা হবে। এই অর্থ অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ ইমার্জেন্সী কোভিড সিচুয়েশন খাতে ব্যয় করা হবে। “Together we can make a difference” এই স্লোগনকে সামনে রেখে কিভাবে আরও জনহিতকর এবং গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে দেশের এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের পাশে থাকা যায় তা নিয়ে বন্ধুরা আলোচনা করে। পর্যায়ক্রমে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানান।
এ জাতীয় আরো খবর..