শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন

আকুতি জানিয়েও সৌদি থেকে ফিরতে পারছেন না সেলিনা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩১২ বার

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সেলিনা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফেরার আকুতি জানালেও তাকে এখনো ফেরাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। সেলিনাকে সৌদি আরবে পাঠানো মেসার্স মিলেনিয়াম ওভারসিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিন ধরনা দিয়েও স্ত্রীকে ফেরাতে না পারায় গত নভেম্বরের মাঝামাঝি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বরাবর আবেদন করেন স্বামী মো: উজ্জ্বল। এরপর গত ২৪ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডে তিনি আবেদন করেন নির্যাতিত স্ত্রীকে ফেরাতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সেলিনা আক্তারকে উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর জন্য বিএমইটি এবং ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড থেকে সৌদি আরবের রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংয়ে চিঠি লেখা হয়; কিন্তু, গতকাল সোমবার পর্যন্ত চিঠির কোনো জবাব দেয়নি শ্রম উইং।

দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএমইটির সহকারী পরিচালক (কর্মসংস্থান) প্রবীর দত্ত সেলিনার স্বামীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে দেশে ফেরত আনতে চিঠি দেন। রোববার বিকেলে এ বিষয়ে বিএমইটিতে গিয়ে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি সেলিনাকে দেশে ফেরত আনা তো দূরের কথা চিঠির জবাবও দেয়নি। অন্য দিকে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংকে চিঠি দিলেও কোনো জবাব আসেনি। গতকাল সোমবার বিকেলে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের দফতরে গিয়ে জানা যায়, তাদের চিঠিরও কোনো জবাব আসেনি সৌদি থেকে। বোর্ডের উপ-পরিচালক জাহিদ আনোয়ার বলেন, আমরা চিঠি লিখেছি। এখন তারা বিষয়টি দেখছে। এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট তাদের (দূতাবাস) পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়নি।

রাজধানী ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইনের সেলিনা আক্তার (বিএক্স- ০৭১৩৯১৭) ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর সৌদি আরবে যান। তার স্বামী এবং স্বজনদের কাছে ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে তিনি তার ওপর নিয়োগকর্তা এবং তার স্বজনদের শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এক সপ্তাহ ধরে এই প্রতিবেদকের সাথে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত কথা হয় সেলিনা আক্তারের। নেটওয়ার্ক দুর্বল হওয়ায় তিনি প্রায় প্রতিদিনই ভিডিওবার্তা দিয়ে তার ওপর শারীরিক, মানসিকসহ নানা নির্যাতনের কথা জানিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ তার সাথে কথা হয় রোববার বিকেলে। তখন তিনি কান্নাজড়িতকণ্ঠে বলেন, ‘ভাই আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। আমি আর পারছি না। আমি মনে হয় মরেই যাবো। প্লিজ আমাকে উদ্ধার করে স্বামী-সন্তানের কাছে নেয়ার ব্যবস্থা করেন।’
এরপর থেকে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কল ঢুকলেও রিসিভ হচ্ছে না। উজ্জ্বল ও সেলিনা এক কন্যাসন্তানের জনক-জননী। গতকাল দুপুরে উজ্জ্বল এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে বলেন, ‘ভাই তাকে (স্ত্রী) তো আর ফোনে পাচ্ছি না। তার কী হলো বুঝতে পারছি না। গত রোববার রাতে কথা বলা অবস্থায় ওই পাশ থেকে এক পুরুষের কণ্ঠ শুনতে পাই। সম্ভবত তার (সেলিনা) মালিক। তাদের কথা বলার একপর্যায়ে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাকে পাইনি। তার জন্য আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় আছি।’

এর আগে সেলিনা আক্তার একাধিক ভিডিওতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান। তিনি বলেন, বিনা কারণেই আমাকে প্রায় প্রতিদিনই মারধর করে নিয়োগকর্তা ও তার স্বজনরা। গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছেঁক দিতে আসে, চুল কেটে দিতে আসে। আমার শরীরজুড়ে মারের (নির্যাতন) দাগ। পিঠে মারে, বুকে-মাথায় মারে। এসব জায়গা দেখানো যায়? কেন আপনারা বুঝেন না। আমি বারবার বলছি, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। কেন নিচ্ছেন না?

সেলিনা আক্তার বলেন, প্রথম ২-৩ মাস ভালোই ছিলাম। তারপর থেকে বেতন নিয়ে সমস্যা করে আসছে। বেতনের কথাও বলতে পারি না। কথায় কথায় মারধর করে। বেশ কিছু দিন ধরে আমি অসুস্থ। আমাকে চিকিৎসা করায় না। আর পারছি না। প্লিজ আমাকে বাঁচান। আমার স্বামী সন্তানের কাছে ফিরিয়ে নিন।

এ দিকে, রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো: মেহেদী হাসানকে গত ৪ ডিসেম্বর থেকে বারবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। নিজের পরিচয় দিয়ে এসএমএস দিলেও কোনো সাড়া দেননি। ফার্স্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে কয়েকবার ফোন দেয়ার পরও রিসিভ করেননি। তবে নিজের পরিচয় দিয়ে এবং কারণ জানিয়ে এসএমএস দেয়ার পর তিনি পাল্টা এসএমএস দিয়ে জানান, সেলিনা আক্তারের বিষয়টি রাফি নামে (তার পদপদবি জানা যায়নি) একজন দেখছেন। এ জন্য তিনি একটি নম্বরও দেন। ওই নম্বরে দুই দিন অসংখ্যবার ফোন দিলেও রাফি ফোন ধরেননি।
গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সেলিনা আক্তারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করেছেন তার স্বামী। এসব আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রথম দিকে ঠিকমতোই চাকরি করছিল সেলিনা। কিন্ত গত ৪ মাস যাবৎ নিয়োগকর্তা ও তার আত্মীয়রা সেলিনাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে যৌন হয়রানিসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। বেতনও দিচ্ছে না। বেতন চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

আবেদনে আশঙ্কা করা হয়, সৌদির নিয়োগকর্তা বা তার পুরুষ আত্মীয়-স্বজন সেলিনা আক্তারকে নির্যাতন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়ে আইনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশী নাগরিকের জীবন রক্ষার মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করত সেলিনাকে সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় নিয়োগকর্তার হাত থেকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানানো হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com