কালের বিবর্তনে স্মার্টফোনের বদৌলতে আজ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে ক্যামেরা। ফলে ছবি তোলা এখন যেন সেলফি নেওয়ার মতোই মামুলি ব্যাপার। অথচ ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ছবি তোলা জিনিসটি মানুষ কেবল কল্পনাই করেছে। অবশেষে ১৮২৭ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জোসেফ নিসেফোর নিপ্স ক্যামেরা অবস্কিউরা ব্যবহার করে ইতিহাসে প্রথম ছবি তুলে তা সংরক্ষণ করে দেখান। এর পর নানাভাবে নানা সময় ক্যামেরার বিবর্তন হলেও ছবি তোলা থেকে গিয়েছিল ধনী লোকের বিলাস। কিন্তু এই ক্যামেরা ব্যবহার করেই যে ফটোগ্রাফিকে শখ হিসেবে নেওয়া যায় তা প্রমাণ করেছিলেন আলফ্রেড স্টিগলিটস, মার্গারেট বৌরকি-হোয়াইট, রবার্ট কাপা, হেনরি কার্টিয়ার-ব্রেসনসহ অসংখ্য চিত্রগ্রাহক। কিন্তু পেশায় ব্যাংকার হয়েও ফটোগ্রাফির প্রতি আসক্তি থেকে পেশাদার চিত্রগ্রাহক আলফ্রেড দুঁতাতেকে নিয়ে সে সময় বিশ্বজুড়ে কিছু স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের ছবি তুলে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ফ্রান্সের অ্যালবার্ট কান। বাঙালির কাছেও অ্যালবার্টের ছবির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ‘দ্য আর্কাইভস অব দ্য প্লানেট’ নামে অ্যালবার্টের সেই ছবির সংকলনেই যে রয়েছে বাঙালির মননের বাতিঘর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম ও শেষ দুটি রঙিন ছবি। এ ছাড়া অ্যালবার্টের সংগ্রহে ছিল রবীন্দ্রনাথের দুর্লভ চলচ্চিত্রও।
প্যারিসে অবস্থিত অ্যালবার্ট কান জাদুঘরের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ১৯০৯ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত অ্যালবার্ট কান ২৩ নোবেল বিজয়ীসহ বিভিন্ন দেশের অন্তত চার হাজার অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, আর্টিস্টকে তার বাগানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ সময় তার নিযুক্ত ফটোগ্রাফার এবং সিনেমাটোগ্রাফাররা এই অতিথিদের স্থিরচিত্র ও ভিডিও সংগ্রহ করে রাখেন। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ১৯২১ এবং ১৯৩০ সালে দুই দফায় অ্যালবার্ট কানের আমন্ত্রণে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। এ সময় অ্যালবার্টের স্টুডিও এবং বাগানে
রবীন্দ্রনাথের ছবি ক্যামেরাবন্দি করা হয়।
দুর্লভ এই দুই রঙিন ছবির প্রথমটিতে দেখা যায়, কালো জোব্বা পরিহিত কবি তার আদরের কন্যা মাধুরী লতা দেবী বা বেলা (বাঁয়ে) ও পুত্রবধূ প্রতিমা ঠাকুরকে নিয়ে কানের স্টুডিওতে বসে আছেন। দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যায় ধূসর জোব্বা পরিহিত রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে আছেন কানের বাগানে। ধারণা করা হয়, ছবি দুটি ১৯২১ সালের জুনে তোলা।
এর আগে ১৯২০ সালে অ্যালবার্ট কান তার ভারত সফরে আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের ছবি সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের মধ্যে খিলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর, গুজরাটের বারোদার মহারাজা তৃতীয় সায়াজি রাও, পাঞ্জাবের কাপুরতলার মহারাজা জগজিৎ সিং, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অন্যতম।