সদ্য ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের (আইএএস) চাকরি ছেড়ে দেয়া শশীকান্ত সেন্থিলের সিদ্ধান্ত, এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) হলে কোনো নথি জমা দেবেন না। সত্যাগ্রহের ডাক দিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পাঠিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমি নাগরিক নই বলে ঘোষণা করা হলে ডিটেনশন সেন্টারে যাব।’’
সেন্থিলের মতোই কাশ্মিরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার পরে আইএএস হিসেবে পদত্যাগ করেছিলেন কান্নন গোপীনাথন। মোদি সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, এনআরসি-র বিরুদ্ধে মুসলিমদের উদ্দেশে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, বিলটা অমানবিক, অসাংবিধানিক। সরকারি নীতিতে আক্রান্ত হলে মুসলিমদের প্রতিবাদ করার সমস্ত অধিকার রয়েছে।
কেউ ডাক দিচ্ছেন ‘সত্যাগ্রহ’-র। কেউ ‘আইন অমান্য আন্দোলন’-এর। টুইটারে ‘সিএবি-এনআরসি সত্যাগ্রহ’, ‘নো টু সিএবি-এআরসি’ হ্যাশট্যাগের ছড়াছড়ি। এত দিন রাজনৈতিক স্তরে প্রতিবাদ হচ্ছিল। দেশের ৬২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিকও বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। গত কাল লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়ে যাওয়ার পর বুধবার রাজ্যসভায় বিল আসার আগে আজ থেকেই অন্য ঘরানার নাগরিক প্রতিবাদ শুরু হলো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তি, বিলের সঙ্গে দেশের মুসলিমদের সম্পর্ক নেই। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ফলে মুসলিমরাই হেনস্থার শিকার হবেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গুজরাত দাঙ্গার পরে চাকরি ছেড়ে দেয়া মন্দার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পরে আইন অমান্য করতে মুসলিম হিসেবে নাম নথিভুক্ত করাব। তার পরে এনআরসি-তে নথি জমা দিতে অস্বীকার করব। নথির অভাবে নাগরিকত্ব চলে যাওয়া মুসলিমদের যে শাস্তি হবে, ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে, আমাকে সেই শাস্তি দিতে হবে বলে দাবি তুলব।’’
প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র অর্থনীতিবিদ লেখা চক্রবর্তী। টুইটারে নিজেকে ‘মুসলিম’ ঘোষণা করে লেখার যুক্তি, ‘‘আমি মুসলিম। ভারতেই আমার জন্ম। আমি ফাতিহা (কোরআনের নির্যাস) জানি। গায়ত্রীমন্ত্রও জানি। কারণ আমার জন্ম ভারতে।’’ জেএনইউয়ের ছাত্রনেতা উমর খালিদও জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে, দেশে এনআরসি হলেও নথি জমা দেবেন না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী করুণা নন্দী বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতের উপরে নীতিগত আঘাত। কিন্তু এনআরসি রোজকার জীবনে বিপজ্জনক।’’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা