শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

বিএনপি নেতৃত্বের মূল পরীক্ষা ২০২৩ সালে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১
  • ১১৭ বার

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপি পরিচালনায় বেগম জিয়ার অনুপস্থিতি ছেলে তারেক রহমান দক্ষতার সাথেই সামাল দিচ্ছেন। তবে বর্তমান নেতৃত্বের মূল পরীক্ষা অপেক্ষা করছে ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পর্বে।

‘দুর্নীতি’র একটি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপিপ্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হন। তাকে এমন এক সময়ে কারাগারে পাঠানো হয়, যখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। তার এই বন্দিত্ব বিএনপির নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ঠিক ওই সময়ে দায়িত্বে এলেও বিএনপিতে এক ধরনের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা পরিলক্ষিত হয়। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির জায়গায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চলে আসে লাইমলাইটে। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কিন্তু তখন রাজনীতির কলাকৌশল দাবি আদায় করে নেয়ার বদলে সমঝোতামুখী হওয়ায় কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচনে টিকে থাকে ঐক্যফ্রন্ট। ফলাফল আসে প্রায় শূন্য।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, শীর্ষ নেতাদের সাথে সমন্বয় করে একটি যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তুলে লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন তারেক রহমান। পরবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজস্ব পরিকল্পনা নীতিনির্ধারকদের সাথে শেয়ার করে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে সময়মতো প্রতিটি সিদ্ধান্ত যাতে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, সে দিকেই জোর দেয়া হচ্ছে। সাংগঠনিক নেতৃত্বও সেইভাবে সাজানো হচ্ছে। তবে গেল দেড় বছর মহামারী করোনার কারণে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপি। অধিকাংশ দলীয় অনুষ্ঠান করতে হয়েছে ভার্চুয়ালি ও সীমিতভাবে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা আলাপকালে বলেন, করোনার এই মহামারী ‘বিএনপির জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না মাঠে নামার কোনো পরিকল্পনা। সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করা যাচ্ছে না। নির্বাচন ঘিরে যেসব দাবি দলটির রয়েছে, তা পূরণে চাপ প্রয়োগও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে করোনা বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মারাত্মকভাবে বাদ সেধেছে।

বিএনপির বর্তমান কার্যক্রম ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দলটির মূল লক্ষ্য ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। ওই নির্বাচনের আগে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে দলটির যেসব দাবি রয়েছে, তা আদায়ে ফের সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মূল দাবি ছিল নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই দাবিতে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধসহ দেশজুড়ে দীর্ঘ আন্দোলন গড়ে তুলে ছিল বিএনপি । কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে দলটি আন্দোলন অব্যাহত রাখে। নির্বাচন পরবর্তী আরো মাসাধিককাল এই আন্দোলন অব্যাহত রাখা হয়। রাজনীতির অন্দরমহলে আলোচনা ছিল, ‘সরকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে ওই নির্বাচন করেছে। দ্রুতই আরেকটি নির্বাচন হবে। বিএনপি মূলত সেই লক্ষ্যে তখন আন্দোলন অব্যাহত রাখে। কিন্তু রাজনৈতিক কলাকৌশলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই তখন টিকে যায় এবং দিনকে দিন শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসে।

বিস্ময়করভাবে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট কিছু সভা-সমাবেশ ছাড়া শক্ত কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়নি। আলোচনার টেবিলে সব দাবির সমাধান হবে, এমন আশায় তারা চরম বৈরী পরিবেশ সত্ত্বেও নির্বাচনে টিকে থাকে। আর ভাগ্যে জোটে ৭টি আসন।
২০২৩ সালের শেষ দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্দোলনের কোন সূত্রটি বেছে নেয়, সেটি এখনই স্পষ্ট হওয়া না গেলেও দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের মূল পরীক্ষা ২০২৩ সালে। কারণ দেশে ভোটের যে ‘নতুন সংস্কৃতি’ চালু হয়েছে, তার সমাধান কেবল যে মুখে মুখে সম্ভব নয়, সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। সে ক্ষেত্রে আন্দোলনই একমাত্র বিকল্প পথ। আর সেই আন্দোলনকে কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে যেতে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে।
নেতারা সতর্ক করে দিয়ে এটাও বলেছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনেও বিএনপি তার লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে, দল হিসেবে আরো নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব প্রসঙ্গে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে তারা গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বিএনপিই সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের জন্য দলকে প্রস্তুত করতেই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো নতুন নেতৃত্ব দিয়ে সাজানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে দলটি, যেটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে ভাবা হচ্ছে।

মহানগরের উত্তরের আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান নয়া দিগন্তকে বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে গুছিয়ে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, ভোটাধিকার নেই, নেই কোনো মৌলিক অধিকার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়েই কেবল এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। জনগণের দল হিসেবে বিএনপি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেই বৃহত্তর লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তারা অগ্রসর হচ্ছে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরো বলেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগেই জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করবে।
আন্দোলনের মাঠে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকেও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। তবে এসব দলের মাঠপর্যায়ে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হাইকমান্ডের উদ্দেশ্যের ব্যত্যয় ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযোগ প্রমাণিত হলে এখন যারা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন তারাও পদ হারাতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com