কমিটি গঠনের পর পরই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে ঘরছাড়া। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত মহানগর বিএনপি এমনিতেই কোন্দলে জর্জরিত। দলের প্রভাবশালী নেতাদের বড় একটি অংশ পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হওয়ায় দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হামলা-মামলা মোকাবিলা এবং বিদ্রোহী নেতাদের সমন্বয় করে নতুন কমিটি নগর বিএনপিকে কীভাবে চাঙ্গা করবে তা-ই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।
মহানগর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, দলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা, যার মূলে রয়েছে বিবদমান গ্রুপগুলোকে সমন্বয় না করে কমিটি গঠন এবং মহানগরের বাইরে থেকে নেতৃত্ব আনা। তারা বলেন, মহানগরের রাজনীতি ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হয় এমন কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে কমিটিতে রাখা হয়নি। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ছাড়া যারা কমিটিতে আছেন তাদের অনেকের মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ। এ কারণে কোন্দল নিরসন করে সংগঠন গোছাতে তাদের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হবে।
ওয়ান-ইলেভেনের পর কয়েক দফা ঢাকা মহানগরের কমিটি করা হলেও তাদের কেউ সফল হতে পারেননি। এর মূলে রয়েছে অনভিজ্ঞ নেতৃত্ব নির্বাচন, কোন্দল ও সমন্বয়ের অভাব। এবারও সেসব সমস্যা বিদ্যমান রেখেই কমিটি করা হয়েছে। এর ওপর হামলা-মামলার মাধ্যমে বিএনপিকে কোণঠাসা করে
রাখার সরকারের পুরনো কৌশল তো রয়েছেই। তবে নতুন নেতৃত্বের ওপর আশা রেখেছেন নেতাকর্মীদের একাংশ। এখন কীভাবে সব কিছু নতুন নেতৃত্ব সামাল দেয় তা দেখার অপেক্ষায় তারা।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাসের সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যানের অনুসারীরাও কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। খোকা-আব্বাসের অনুসারীদের অবস্থান কেমন হয়, তা-ও নতুন দুই কমিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল আছে। দীর্ঘদিন থেকে ওয়ার্ড বা থানায় নতুন কমিটি না হওয়ায় জটও লেগে আছে।
মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব, হামিদুর রহমান হামিদ, শামীম পারভেজ, মাসুদুর রহমান খান, এসএ সাজু, শেখ রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন কমিটিতে ঠাঁই পাননি। আগের কমিটির ধারাবাহিকতায় তানভীর আহমেদ রবিনসহ কয়েকজন নেতাকে পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি। মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, বজলুল বাসিত আনজু, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহানগর উত্তর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রত্যাশী থাকলেও তাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। ইশরাক হোসেন কাক্সিক্ষত পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ।
গত ২ আগস্ট ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান ও সাবেক ডেপুটি মেয়র আবদুস সালামের নেতৃত্বে যথাক্রমে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ১৭ আগস্ট দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন এই কমিটির কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল। ওই দিন চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে তিনটি মামলায় আসামি হওয়া ছাড়াও বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
মহানগর নেতারা বলেন, কমিটিতে স্থান না পাওয়া, কাক্সিক্ষত পদ-পদবি না পাওয়া এবং সিনিয়র নেতাদের গ্রুপিংসহ নানা কারণে নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ ছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনায় দৃশ্যমান কোনো ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে উত্তর ও দক্ষিণের পুরো কমিটি এখন মামলা মোকাবিলার পাশাপাশি আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। এ অবস্থায় কবে নাগাদ এই কমিটি সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
যদিও উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, অতীতের সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে দলকে সুসংগঠিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা আমাদের অঙ্গীকার। উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন শক্তিশালী করা। গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে রাজপথে আন্দোলন তৈরি করা। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তারা সফল হবেন বলে আশা করেন।
নতুন কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সামনের দিনে আন্দোলন সফল করতে হলে ঢাকায় তা জোরদার করতে হবে। এ চিন্তা থেকে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর বিএনপি ক্রমান্বয়ে কর্মসূচিতে যাবে।