বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন যুবদলকে ঢেলে সাজানোর কাজে হাত দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে সাড়ে চার বছর পর শনিবার রাতে আকস্মিকভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের তাগিদও শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার যে প্রক্রিয়া চলছিল, তাতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুবদলের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। সংগঠনের নেতাকর্মীদের নতুন করে নানা আলোচনাও শুরু হয়েছে।
সংগঠনের কেউ কেউ বর্তমান অপূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পক্ষে। এর পক্ষে তাদের যুক্তি- যারা দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে আছেন, তাদের অনেকে পদপদবি পাননি। পূর্র্ণাঙ্গ কমিটি হলে পরিচয় দেওয়ার মতো পদ পাবেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ ‘সুন্দর’ করবে মনে করেন।
কারও কারও মতে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করলে সময়ক্ষেপণ হবে। তার চেয়ে ভালো, নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা। এতে দলে প্রাণ আসবে। নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব তৈরি হবে।
দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করতে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে অনেকের ধারণা, শিগগিরই যুবদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি-ই গঠন করা হবে।
অবশ্য যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা যুবদলের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করছি।’
এদিকে মহানগর কমিটি গঠন হওয়ায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সম্ভাব্য নতুন কমিটির শীর্ষপদে কারা আসতে পারেন তা নিয়েও আলোচনা শুরু করেছেন। অনেকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। নেতৃত্ব নির্বাচনে যাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাদের তালিকাও খুব ছোট নয়। এ তালিকায় রয়েছেন যুবদলের বর্তমান কমিটির সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, শফিকুল ইসলাম মিলটন, আবদুল মোনেম মুন্না, গোলাম মাওলা শাহীন, জাকির হোসেন নান্নুু। এ ছাড়া ছাত্রদলের সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব ও আকরামুল হাসানের নামও আলোচনায় আছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কমিটি গঠনের বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেখভাল করেন। শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি গঠন নিয়ে তার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ যুবদলের শীর্ষ ৫ নেতা। বৈঠক শুরুর কয়েক মিনিটের মাথায় ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলটন এবং দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শরিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীনের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। একই বৈঠকে বিলুপ্ত উভয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিলটন ও শাহীনকে আহ্বায়ক করা হয়। বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেলকে উত্তরে ও ছাত্রদলের আগের সভাপতি খন্দকার এনামুল হককে দক্ষিণের সদস্য সচিব করা হয়।
নতুন কমিটি গঠনের পর গতকাল রবিবার নতুন নেতৃত্ব নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলে সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। কমিটি গঠন কেন্দ্র করে সংগঠনের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড়ও ছিল অনেক বেশি। এ সময় সেখানে মহানগরের পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাকর্মীকে দেখা যায়। ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি এসএম জাহাঙ্গীর ও রফিকুল আলম মজনুকে আহ্বায়ক করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি মজনুকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব করা হয়।
জানতে চাইলে মামুন হাসান বলেন, আশা করি এই কমিটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, সাত দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটির বাকি সদস্যদের নাম জমা দিতে বলা হয়েছে। কত সদস্যের এ কমিটি হবে, সেটি কমিটি জমা দেওয়ার পর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আকস্মিকভাবে কেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো? এই প্রশ্নে যুবদলের দায়িত্বশীল নেতারা বিশেষ কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদ্য বিলুপ্ত কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ভালোভাবে সমন্বয় হচ্ছিল না। যার কারণে বিভিন্ন ওয়ার্ড থানা কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছিল। এ কারণে ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত এসএম জাহাঙ্গীরের কমিটি বিলুপ্ত করা নিয়ে দলের মধ্যে নানা কথাবার্তা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু জাহাঙ্গীরের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, এখন কেন্দ্রীয় কমিটিও যে কোনো সময় বিলুপ্ত করা হতে পারে। এ অবস্থায় ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত ১২ নেতা চিন্তায় পড়ে গেছেন। কারণ যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার কথা ছিল।
অবশ্য, জাহাঙ্গীর নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে এই নেতৃত্ব অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে আশা করি।
জানতে চাইলে বহিষ্কৃত নেতা এজমল হোসেন পাইলট আমাদের সময়কে বলেন, ‘দলের যে কোনো সংগ্রামে আমরা আবার নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে অংশগ্রহণ করতে চাই। যদিও বহিষ্কার হওয়ার পরও দল ঘোষিত সব কর্মসূচিতে আছি। আমরা আশাবাদী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের প্রতি সদয় দৃষ্টি দিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে সংগঠনে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবেন।’
যুবদলের কয়েক নেতা বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি দিয়ে কাজ চলছে। এ অবস্থায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলে যুবদলের কিছু সক্রিয় নেতাকর্মী পদপদবি পেয়ে পরিচয় নিয়ে বিদায় নিতে পারবেন।