শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কলকাতায় বাংলাদেশি কনস্যুলেট ঘেরাওয়ের চেষ্টা, সংঘর্ষে আহত পুলিশ চলমান অস্থিরতার পেছনে ‘উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন’ দেখছে সেনাবাহিনী জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির বিচারপতিকে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ ইসরাইলের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা হিজবুল্লাহর বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদির সাথে কথা বলেছেন জয়শঙ্কর ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবী সাইফুল হত্যা : সরাসরি জড়িত ৮, শনাক্ত ১৩ র‍্যাবের সাবেক ২ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ ছেলেসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ

কেন হঠাৎ কমছে রেমিট্যান্স

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৪৬ বার

করোনার কারণে দেশে ফেরা প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশে যাননি। নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে না পারায় প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সে। দিন দিন কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। এভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকলে রিজার্ভে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গত দেড় বছরে অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণ ছিল সরকারের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা। করোনায় বিধিনিষেধ আরোপ থাকায় আন্তর্জাতিক যাতায়াত বন্ধের কারণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠানো, মধ্যপ্রাচ্য থেকে চাকরি হারিয়ে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে আসার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছিল।

বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধিনিষেধের কারণে এখনো অনেক প্রবাসীকর্মী নিজ কর্মস্থলে যেতে না পারা, হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসায় প্রধানতম কারণ।

এদিকে আগস্টের শেষে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ-সহায়তায় ভর করে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বরাদ্দের ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার যোগ হওয়ার পর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের (প্রথম মাস) জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার (১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা টাকার অঙ্কে ১৫ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে দেশে ১৮১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা তার আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে ৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার কম। এ ছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ বা প্রায় ৮ শতাংশ কম।

একদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চে স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এপ্রিল থেকে ৩১ ডিসেম্বর এই সময়ে চার লাখ ৮ হাজার ৪০৮ কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজারই নারীকর্মী।

ফেরত আসাদের মধ্যে সৌদি আরব থেকেই ফিরেছেন এক লাখ ১৯ হাজার কর্মী, যা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার, কাতার থেকে ৪৯ হাজার, ওমান থেকে ২৪ হাজার ৪৫৭, মালয়েশিয়া থেকে ১৭ হাজার ১০৬, মালদ্বীপ থেকে ১৬ হাজার, কুয়েত থেকে ১৫ হাজার ২২৭, ইরাক থেকে ১০ হাজার, লেবানন থেকে আট

হাজার ৭৬২, সিঙ্গাপুর থেকে আট হাজার ৪২৪ ও বাহরাইন থেকে সাড়ে চার হাজার কর্মী ফিরে এসেছেন। ফেরত আসার এই প্রবণতা চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে।

সম্প্রতি এক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য সতর্ক করে বলেছিলেন- ‘বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত হবেন রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটি সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ মানুষ বিদেশে গেছে কম, এসেছে বেশি। সরকারি প্রণোদনার কারণে হুন্ডি থেকে মানুষ ব্যাংকিং খাতে টাকা পাঠিয়েছে। এ অবস্থায় জাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটিই বোঝার বিষয়। রপ্তানি আবার আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কর আদায়সহ সব সূচক যদি বিবেচনায় নেওয়া হয় তা হলে দেখবেন প্রাথমিক সংকেত ভালো না।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনীম সিদ্দিকী আমাদের সময়কে বলেন, করোনার শুরু থেকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ থাকায় অনেকেই হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা বড় ভূমিকা রেখেছে। ওই সময়ে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে- করোনায় কর্মহীন হয়ে অনেক প্রবাসী তার শেষ সম্বলটুকুও দেশে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে যেভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, এভাবে দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে রিজার্ভের ওপর বড় চাপ পড়বে। ধাক্কা আসতে পারে রিজার্ভে। যদিও বর্তমানে রিজার্ভ অনেক শক্তিশালী। যেসব দেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ আসে সেখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠানোর পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছে ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, আগস্টে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৩৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে- গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com