শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মোড়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১১৬ বার

দীর্ঘদিন থেকেই বরিশাল আওয়ামী লীগে নতুন করে গ্রুপিং নিয়ে কানাঘুষা চলছিল। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্র সঙ্গ ছেড়ে কয়েকজন কাউন্সির বিদ্রোহী হচ্ছেন বলেও গুঞ্জন ছিল নগরজুড়ে। এবার সেই গুঞ্জনকে বাস্তব রূপ দিলেন সিটি করপোরেশনের ৯ কাউন্সিলর। দুঃসময়ে মেয়র সাদিকের সঙ্গ ছেড়ে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নিয়েছেন তারা। নেতা পানিসস্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম এমপির সঙ্গে ছবি তুলে প্রকাশ্যেও এসেছেন তারা। তবে বিষয়টিকে মোটেও নেতিবাচকভাবে দেখছেন না মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রপন্থী নেতারা।

ওই ৯ কাউন্সিলর হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমীর বিশ্বাস, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৌহিদুল ইসলাম বাদশা, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন ভুলু, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াউর রহমান বিপ্লব, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আনিসুর রহমান দুলাল, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনামুল হক বাহার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ মো. আনিসুর রহমান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ন কবির এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ আহম্মেদ।

ছবিতে ওই ৯ কাউন্সিলরের সঙ্গে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও শ্রমিক নেতা সুলতান মাহমুদও রয়েছেন। গত সোমবার রাতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ‘বরিশাল সদর’ নামের

ই-মেইল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রতিমন্ত্রীর অফিস কক্ষে তারা এ সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।

সাক্ষাৎকালে কাউন্সিলররা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বরিশালের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে কথা বলেন। সেই সঙ্গে নাগরিক সেবা নিশ্চিত কল্পে অন্য কাউন্সিলরদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সম্প্রতি বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে প্রশাসনের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার পর সমঝোতায় পৌঁছায় দুপক্ষ। জামিনও হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ২৩ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর।

তবে সমঝোতায় কী হয়েছে সে বিষয়টি এখনো সুস্পষ্ট নয়। আবার জামিন হলেও কোনো পক্ষই তাদের করা মামলা তুলে নেয়নি।

ফলে মামলার ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়েও প্রশ্নের জট খুলছে না সহসাই। এর মধ্যে সম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের দেওয়া বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে আরও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী মামলা মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

দুপক্ষের বিরোধের পূর্ণাঙ্গ সমাধান না হতেই বরিশালের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন সিটি করপোরেশনের ৯ কাউন্সিলর। যদিও তাদের মধ্যে চারজন অনেক আগেই সাদিকবিরোধী শিবিরের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে আসেন। এবার প্রকাশ্যে এলেন আরও পাঁচজন। হঠাৎ করে সাদিকের সঙ্গ ত্যাগ করা কাউন্সিলদের উদ্দেশ্য এবং কারণ খুঁজতে শুরু করেছেন অনেকে।

সাদিকবিরোধী কাউন্সিলরদের দাবি, তারা অপরাজনীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আর অমর্যাদা পেয়েই মেয়র সাদিকের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের গত তিন বছরে কাউন্সিলর হিসেবে ন্যূনতম সম্মান পাননি তারা। কাউন্সিলরদের মতামত ছাড়াই যে কোনো সিদ্ধান্ত একাই নিয়েছেন মেয়র, যেটা স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার।

এ ছাড়া মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উল্লেখ করে কাউন্সিলররা বলেন, এখন ৯ জন কাউন্সিলর মেয়রের সঙ্গ ছেড়ে প্রকাশ্যে এসেছেন। আরও বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর আছেন, যারা সুযোগের সন্ধানে আছেন। সুযোগ বুঝে তারাও মেয়র সাদিকের সঙ্গ ত্যাগ করে প্রকাশ্যে আসবেন বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্র ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিসিসির প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু পরিষদের ৯ কাউন্সিলরের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীও আমাদের মহানগরের জনপ্রতিনিধি। এলাকার উন্নয়নে তার সঙ্গে অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা সাক্ষাত করবে এটাই স্বাভাবিক। সিটি করপোরেশনের সব প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সু-সম্পর্ক বিগত দিনে ছিল, আগামীতেও থাকবে বলে মন্তব্য করেন গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ এবং প্রচীন সংগঠন। এখানে নেতার যেমন অভাব নেই, তেমনি কর্মীরও অভাব নেই। একজন কর্মী যেকোনো একজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অর্থ এই নয় যে, তিনি অন্যসব নেতার নেতৃত্ব মানছেন না। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে বলেও জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com