শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন

মাঠে গড়াচ্ছে রাজনীতি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১২৩ বার

করোনা সংক্রমণের প্রায় দেড় বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ নিরুত্তাপ ছিল। কয়েকটি ইস্যুতে পরিস্থিতি গরম হলেও তা মাঠে গড়ায়নি। উত্তাপহীন এ সময় পার হওয়ার পর রাজনীতি আবার মাঠে গড়াতে শুরু করেছে। মাঠের কর্মসূচি ঠিক করতে এক বছর পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম-জাতীয় স্থায়ী কমিটি ধারাবাহিক বৈঠক করে কর্মকৌশল ঠিক করছে। দুদলের প্রস্তুতি রাজনীতি অঙ্গনে খুব উত্তেজনা ছড়ানোর আভাস দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা বলছেন, সামনে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামবে। আগামী ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে গ্রহণযোগ্য ইসির দাবিতে তাদের মাঠে নামার পরিকল্পনা আছে। বিএনপির আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের মেয়াদ ‘অর্ধ সময়’ পার হওয়ায় সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়তে থাকে। তার আগে সংগঠন গোছানোর দিকে হাত দেয় দলগুলো। করোনার কারণে এবার সংগঠনের গোছানোর কাজ সময়মতো হয়নি। এখন দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে দুই দল। যেহেতু সামনে আন্দোলনের সময়, তাই মাঠের রাজনীতি সক্রিয় হবে শিগগিরই এমনটি অনুমেয় হচ্ছে।

জানা গেছে, আগামী জানুয়ারিতে সরকারের তিন বছর শেষ হবে। তখনই শুরু হবে মূল রাজনীতি। এর আগে দুই দল ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা আগামী কিছুদিনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে। তবে বছরখানেক পর রাজনীতির মাঠ সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। কারণ নির্বাচমুখী দুই দল মাঠে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করার চেষ্টা করবে।

সম্প্রতি বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি কমিটি গঠনের পর জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এর পর স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কয়েকটি অঙ্গসংগঠন ইস্যুভিত্তিক দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরে ফুল দেয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির মিত্র দলগুলোর নেতাকর্মী বিভিন্ন ইস্যুতে মানববন্ধন করেছে। গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভা করেছে।

আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি শুরু : করোনার ভয়াবহতা কিছুটা কমে আসায় পুরোদমে মাঠের রাজনীতিতে মনোযোগ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলে বিরাজমান দ্বন্দ্বের অবসান, ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলে কমিটি দেওয়া, আসন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনসহ নানাবিধ কাজের মধ্য দিয়ে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে যাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রায় এক বছর পর কার্যনির্বাহী কমিটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দলটি। গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হবে। রীতি অনুযায়ী সভার সঞ্চালনা করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন দলের অভ্যন্তরে বিরাজমান অভিমান, অভিযোগ, আসন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিসহ নানাবিধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে সভা থেকে। একই সঙ্গে দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে যাচ্ছে। ফলে এই শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে কেউ যেন কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেদিকটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানান তারা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের সবশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত বছরের ৩ অক্টোবর। ওই সভায় ৮১ সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৩২ জন। প্রায় এক বছর পর অনুষ্ঠেয় আজকের সভায় দলের প্রায় অর্ধশত নেতা উপস্থিত থাকার কথা জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের শেষদিকে সাংগঠনিক সফরে যাবেন দলের নেতারা। ডিসেম্বরের মধ্যে দল গোছানোর কাজ শেষ করে জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখী হবে দলটি। একই সঙ্গে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা করার প্রস্তুতিও রাখবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী দল। সব সময়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় থাকায় বিশ^াসী। একটি নির্বাচন শেষ হলে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে দলটি কাজ করে। এই দলে হঠাৎ করে কিছু শুরু হয় না বা শেষ হয় না। সব সময় মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে রাজনীতি করে। সাম্প্রতিক সংকটকালে অনেক দল যখন ঘরে চলে গিয়েছিল তখনো আমরা মানুষের কাছে ছিলাম। সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে মানুষের জন্য কাজ করেছি। তিনি বলেন, তবে এটি সত্য করোনার ভয়াবহতা কিছু কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ বেড়েছে। আমরা সেই সুযোগ নিয়ে কাজ করছি।

জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে পুরো দেশের সাংগঠনিক সফর করা এবং তৃণমূলের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য রাজনীতির মাঠে নামার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে তৃণমূলের কমিটি গঠনের কাজও তারা করবে। শুধু জাতীয় পার্টিরই নয়, দলের সহযোগী সংগঠনের কমিটি দেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আপাতত আমরা দল গোছানোর কথা ভাবছি। দল এবং দলের নেতাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর কথা ভাবছি। আমাদের দল গোছানোর কাজ শেষ করে আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করব।

গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনের দাবি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি : যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে রাজপথে নামবে বিএনপি। এ আন্দোলনে তাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোট অথবা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল থাকবে বলে তাদের আশা। এ লক্ষ্যে দলটি উদ্যোগী হয়ে পর্যায়ক্রমে সব রাজনৈতিক দল ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবে। দলটির নেতারা জানান, নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবি আদায়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। গত শনিবার বিকালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় দলের নেতারা এ মতামত দেন।

দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, আগে বিএনপি শুধু ২০-দলীয় জোট, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করত। কিন্তু এখন থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ধারাবাহিকভাবে এ বৈঠকে থাকবেন। যদিও জাতীয় ঐক্য গড়তে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দলের মহাসচিবসহ দায়িত্বশীল নেতারা অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা মাধ্যমে আলোচনা শুরু করেছেন। সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্য গড়তে কাজ শুরু করেছি।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জোটে তো অনেক রাজনৈতিক দল আছে। থাকুক না, মন্দ কী। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে রাজপথে নামতে হবে। তারা নামলে আমিও তাদের সঙ্গে থাকব।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য মনে করেন, আগামী নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নিশ্চিত করতে বিএনপিকেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিএনপিকেই উদ্যোগী হয়ে আগে মাঠে নামতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমাদের সময়কে বলেন, গ্রহণযোগ্য ভোটের দাবিতে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই।

দলের এক নেতা বলেন, আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ইসি গঠনে সরকারবিরোধী ডান ও বাম সব রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে আনার চেষ্টা করছে দলটি। ইতোমধ্যে ২০-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। একইভাবে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে চেষ্টা করবেন দলের দায়িত্বশীলরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তরে তাদের অধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য ৮ টিম কাজ করেছে। গতকাল মহানগর উত্তর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের নেতৃত্বে বিএনপি ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে পৃথক সমন্বয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক করেছেন। এসব কার্যক্রম সংগঠন গুছিয়ে দলকে আন্দোলনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে। এদিকে আন্দোলনে নামার আগে দলের মূল শক্তি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করার কাজও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com