অবশেষে মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠনে যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল, সেসব রাজাকারের তালিকার প্রথম পর্ব আজ প্রকাশ করবে সরকার।
একইসাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হবে। এর আগে বলা হয়েছিল, এ তালিকা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রকাশ করা হবে। এখন একদিন আগেই তা প্রকাশ করা হচ্ছে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনের ছয় তলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তালিকাগুলো প্রকাশ করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী প্রকাশ করবেন তা নতুন কিছু নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অতীতে সংগ্রহ করা একাত্তরের রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ভাতা নিয়েছে বা যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, তাদের নাম-পরিচয়, ভূমিকাসহ যেসব তথ্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল সেই তথ্য ধরে করা তালিকাই তিনি আবার প্রকাশ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে বলে মন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানা গেছে।
সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ জানান, গত ২ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওইদিন বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, তালিকা হাতে আসা শুরু হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, ১৬ ডিসেম্বরের আগে থেকে যতটুকু আসবে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরু হওয়ার কথা গত ২৫ আগস্ট সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বৈঠকে জানানো হয়েছিল, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা সংগ্রহ করে তা রক্ষণাবেক্ষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আধাসরকারি (ডিও) চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, এটি নতুন কোনো তালিকা নয়। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজাকারদের তালিকা আগে থেকেই রয়েছে। রাজাকার হিসেবে যারা যারা ভাতা নিয়েছে, রাজাকার হিসেবে যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও অনেক নাম রয়েছে, যারা রাজাকার হিসেবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে- সেসব নাম জোগাড় করেই এই তালিকা আগে থেকেই ছিল।
তিনি বলেন, সেই তালিকা ধরেই প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে রাজাকারদের আরো তালিকা প্রকাশ করা হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতেই স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকারদের নাম প্রকাশের এমন উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা আগে থেকেই রয়েছে তার একটি অংশও তিনি তুলে ধরবেন বলে জানান।