পৃথিবী চলছে ইন্টারনেটের ওপর ভর করে। আর এই ইন্টারনেটব্যবস্থাকে আমূল বদলে ফেলে নতুনত্ব আনতে যাচ্ছে এলন মাস্কের স্টারলিংক। তিনি পুরো পৃথিবীকে ঘিরে ফেলছেন তার স্পেস এক্সের স্যাটেলাইট দিয়ে। উদ্দেশ্য- স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবী সব অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেটসেবা দেওয়া। স্টারলিংক নিয়ে আরও বিস্তারিত জানিয়েছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
ইলন মাস্ক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটসেবা দেওয়ার এই প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ‘স্টারলিংক প্রজেক্ট’। ৪২ হাজার স্যাটেলাইট দিয়ে তিনি গোটা পৃথিবী ঘিরে ফেলবেন। উদ্দেশ্য- সেসব স্যাটেলাইট দিয়ে সারাবিশ্বকে ইন্টারনেট সুবিধা দেবেন। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৪৩টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন তিনি। সবশেষ গত ২৯ এপ্রিল একসঙ্গে ৬০টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন। এলন মাস্কের একত্রে এত স্যাটেলাইট পাঠানোকে বলা হচ্ছে ‘স্যাটেলাইট ট্রেন’। এসব ট্রেন দিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি আনাচে-কানাচে ইন্টারনেটের রেঞ্জ তৈরি করা যাবে। তা দিয়ে পুরো দুনিয়াকে একই ইন্টারনেট প্রদান করবে স্টারলিংক। এর গতি হবে ১০০ এমবিপিএস ও লেটেন্সি মাত্র ৩১এমএস। বোঝাই যাচ্ছে, খুব দ্রুতগতির ইন্টারনেটের আওতায় আসবেন সবাই। সাধারণত আমাদের কাছে স্যাটেলাইট থেকে যেসব ইন্টারনেট আসে, ওই স্যাটেলাইটের উচ্চতা ৩৫ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু স্টারলিংক প্রজেক্টের স্পেসএক্সের রকেটের উচ্চতা থাকার কথা মাত্র ৫ হাজার কিলোমিটার! এ জন্য আমরা পেতে যাচ্ছি উচ্চগতির ইন্টারনেট! বর্তমানে লো-আরবিট স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির লক্ষ্যে অনেক প্রজেক্টের কাজ চলছে। এগুলোর তত্ত্বাবধানে আছে বিশ্বের বাঘা বাঘা টেক কোম্পানি। যেমন- ঝঢ়ধপবঢ-এর প্রজেক্ট ঝঃধৎখরহশ, ছঁধষপড়সস-অরৎনঁং-এর প্রজেক্ট ঙহবডবন, অসধুড়হ-এর প্রজেক্ট কঁরঢ়বৎ।
যেভাবে কাজ করবে স্টারলিংক : নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্টারলিংক লো-অরবিট স্যাটেলাইট ব্যবহার করবে। জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। এ কারণে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করতে হলে অনেক দূর পথ অতিক্রম করতে হয়। ফলে স্পিড তো কম হয়ই, সঙ্গে ল্যাটেন্সিও হয় বেশি। অন্যদিকে লো-অরবিট স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫০০ থেকে ১ হাজার কিলোমিটার ওপরে থাকে- যেখানে জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট থাকে ৩৪ হাজার কিলোমিটার ওপরে! পৃথিবীপৃষ্ঠের অত্যন্ত কাছাকাছি অবস্থান করার কারণে এই স্যাটেলাইটগুলো দিয়ে অত্যন্ত দ্রতগতিতে ডেটা আদান-প্রদান করা সম্ভব হয় এবং কাছাকাছি অবস্থানের কারণে ল্যাটেন্সিও হয় অনেক কম।
আমরা বর্তমানে যে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করি, এতে আলোক সংকেত ব্যবহার করে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়। কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবারের আলোকে গ্লাস মিডিয়ামের ভেতর দিয়ে যেতে হয় বলে আলোর গতি প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। লো-অরবিট স্যাটেলাইটগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ ও ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে লেজার-লাইট ব্যবহার করবে। যেহেতু এ ক্ষেত্রে আলোকে গ্লাসের বদলে বাতাসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, সেহেতু আলোর গতি কমে যায় না। আলো তার পূর্ণগতিতে চলতে পারার কারণে ডেটা আদান-প্রদানের স্পিডও বেশি হয়।
স্টারলিংকের উদ্দেশ্য
এখনো পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকের বেশি
মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
অপটিক্যাল ফাইবার কিংবা মোবাইল নেটওয়ার্কের
মাধ্যমে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসেবা প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল একটি কাজ। তাই স্টারলিংকের মতো প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পৃথিবীব্যাপী সর্বজনীন ইন্টারনেটসেবা প্রদান করার লক্ষ্যে। এর মাধ্যমে আমেরিকায় বসবাস করা একজন ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকার একজন- উভয়ই সমান ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হবে।