এক মাস হচ্ছে, তালেবান আফগানিস্তানে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথে আফগানদের জীবনের নানা ক্ষেত্রেও প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এ সময়ে নগদ অর্থ সরবরাহ কম গিয়ে দেশটির অর্থনীতির সংকট আরও গভীরতর হয়েছে।
ক্ষুধা, দারিদ্র্য, খাদ্য ও মেধা সংকটে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারও মারাত্মক এক আর্থিক সংকটে পড়েছে।
দ্রুত ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে অর্জিত সামরিক সাফল্যকে স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সরকার ব্যবস্থায় রূপান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছে তালেবান নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে কাজটি তালেবানের জন্য সহজ হচ্ছে না। নানামুখী সংকটের মধ্যে পড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশের সরকার চালাতে গিয়ে তালেবান হিমশিম খাচ্ছে।
দীর্ঘ একটা সময় ধরে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গেছে আফগান নাগরিকরা। সর্বশেষ গত ২০ বছর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অধীনস্ত ছিল তারা। মার্কিন সেনার বিদায়ের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু গত দুই দশকে উন্নয়ন খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও আফগানিস্তানের অর্থনীতি এখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধ-সংঘাতের ফলে সৃষ্টি হওয়া দুর্ভিক্ষের সাথে যোগ হয়েছে খরা। ফলে,দেশটির হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপির) আশঙ্কা, দেশটিতে যে খাদ্য মজুত আছে চলতি মাসের শেষদিকেই তা ফুরিয়ে যেতে পারে। এতে করে এক কোটি ৪০ লাখের বেশি আফগান পড়তে পারেন অনহারের মুখে।
কিন্তু এই খাদ্য সংকট তেমন কোন গুরুত্ব পাচ্ছেনা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে। তাদের উদ্বেগ এখন শুধু আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন সরকার নারীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে কিনা বা আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে তা নিয়ে।
কিন্তু তারা এই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছে যে,দেশটির সাধারণ মানুষের কাছে এখন অধিকার নয় বরং অগ্রাধিকার পাচ্ছে কোনোমতে টিকে থাকা বা দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগানো।
কাবুলের এক স্থানীয় বাসিন্দার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে,শিশুরাসহ আফগানিস্তানের প্রতিটি মানুষ এখন ক্ষুধার্থ। তাদের কাছে এক ব্যাগ ময়দা কিংবা রান্না করার মতো তেল নেই।
অর্থকষ্টে তারা থালাবাসান, হাঁড়ি-পাতিল, বালিশ, কম্বল, ফ্যানসহ ঘরের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন বিক্রি করবেন বলে। কমমূল্যে এসব বিক্রির জন্য কাবুলে অস্থায়ী হাঁটও গড়ে উঠেছে।
রয়টার্স তার প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, চার দশক ধরে দফায় দফায় যুদ্ধ ও সংঘাত দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আফগানরা। সর্বশেষ মার্কিন সেনাদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের অবসানকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। তবে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলেও অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে তাদের কারো চোখেমুখে এখনো স্বস্তির দেখা মিলছে না।