করোনাকালের দীর্ঘ ছুটির পর স্কুলে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। গত রোববার থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব ক্লাসের শিক্ষার্থীরাই এখন স্কুলে গিয়ে সশরীরে ক্লাস করছে। যদিও শ্রেণীভেদে সব শিক্ষার্থী প্রতিদিন ক্লাস করছে না। প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই প্রতিদিন ক্লাস করছে। অন্যদের ক্লাস হচ্ছে সপ্তাহে এক দিন। গত চার দিনের ক্লাসের উপস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেশি। অর্থাৎ স্কুলে গ্রামের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামুলক কম।
এদিকে স্কুল কলেজ খোলার প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির বিষয়ে মনিটরিং করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) সংশ্লিষ্ট শাখা।
স্কুল খোলার প্রথম দুই দিনে মনিটরিং সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৮০ শতাংশ আর জেলা পর্যায়ে ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। একইভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের ওই একই সময়ে স্কুলে উপস্থিতি ছিল কম।
ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিনে দেশের ৬৪ জেলায় ৭৩ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, খুলনায় ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সিলেটে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বরিশালে ৭৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। ক্লাসে উপস্থিতির এই হার পুরো বিভাগের ধরা হলেও শহরকেন্দ্রিক স্কুলগুলো উপস্থিতি বেশি থাকলেও মফস্বল বা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।
অন্যদিকে মাউশির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি ১৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিদিনের শিক্ষার্থী-শিক্ষক উপস্থিতিসহ যাবতীয় তথ্য ছক আকারে দিতে বলা হলেও প্রথম দিন ১৪ হাজার ৮১৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দিন ১৮ হাজার ৪০৮টি স্কুল-কলেজ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানো হয়েছে। এতে ঢাকা মহানগরের মধ্যে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৮০ শতাংশের বেশি আর জেলা পর্যায়ে এ হার ৭০ শতাংশের বেশি। গড় হিসেবে ঢাকায় উপস্থিতি ৮০ শতাংশ থাকলেও জেলা পর্যায়ে তা ছিল ৫০ শতাংশ।
মাউশির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, স্কুল খোলার প্রথম দিকে যদিও ক্লাসে উপস্থিতির হার আমাদের কাছে কম মনে হচ্ছে। তবে এই হার ক্রমেই আরো বাড়ছে। আমরা বিভাগ ও জেলা পর্যায় থেকে যে তথ্য পাচ্ছি তাতে দেখা যাচ্ছে ক্লাসে উপস্থিতির হার দিন দিন আরো বাড়বে।
ডিপিইর মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, দেশের সব বিদ্যালয়ে নির্দেশনা মোতাবেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসে পাঠদান শুরু হয়েছে। ক্লাসে আসতে পেরে শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি। শিক্ষক-অভিভাবকরা দ্রুত আরো বেশি সংখ্যক ক্লাস শুরুর দাবি জানিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে এক সপ্তাহ পর শ্রেণী ও ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।