সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন

দিল্লিতে সংঘর্ষের পর ভারত জুড়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩০১ বার

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে পুলিশ গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এরপরেই পুলিশি তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রায় গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র বিক্ষোভ।

এনডিটিভি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংহতি মিছিলের পরে সেখানেও শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। এর জের ধরে মধ্যরাতেই গর্জে ওঠে হায়দরাবাদের মাওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সংঘর্ষের পর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খালি করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রধান জানান, সোমবার সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে।
পুলিশ সুপার ওপি সিং বলেন, “আমরা আজ বিশ্ববিদ্যালয় খালি করিয়ে দিচ্ছি, সমস্ত শিক্ষার্থীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেব।’

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে দিল্লির পুলিশ সদর দফতরের বাইরে কয়েকশ মানুষের জড়ো হয়, সেখানেও বিক্ষোভ করে তারা। রোববার সন্ধ্যায় জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিল ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভাঙচুর চালায় ও যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়। সেই সময়েই পুলিশ এলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাঁধে শিক্ষার্থীদের।

লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে। যদিও পরে আটক করা সব শিক্ষার্থীকেই ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে মধ্যরাতে হায়দরাবাদের মাওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ মিছিল করে। এই বিক্ষোভের ছোঁয়া লাগে কলকাতাতেও। মধ্যরাতে মিছিল করে ঘটনার প্রতিবাদ করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। মওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানায়।

জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে, অসংখ্য মানুষ শীতকে উপেক্ষা করে মধ্যরাতেই দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরে জড়ো হন। পুলিশি সদর দফতরের বাইরের মূল রাস্তাটি অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদকারীরা। সেই সময় পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় সেই জন্যে আগাম সতর্কতা স্বরূপ সেখানে সমস্ত প্রস্তুতি পুলিশ নিয়ে রেখেছিল বলে জানা যায়।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ভোর সাড়ে তিনটের দিকে সমস্ত শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরেই দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরের বিক্ষোভকারী জনতাও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ।

এই বিক্ষোভের আঁচ প্রথম লাগে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে ছাত্ররা মিছিল করলে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। ঘটনায় দশ জন পুলিশ ও প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সেই সময়েই পুলিশ ছাত্রদের হোস্টেল খালি করে দেওয়ার কথা বললে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই এলাকায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত রোববার সন্ধ্যায় দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে। ওই মিছিল যন্তর মন্তর নামক জায়গায় এসে শেষ হবে বলে ঠিক ছিল; কিন্তু সেই সময়েই ওই বিক্ষোভকারীরা ভাংচুর শুরু করে। জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের জেরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এবং কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও আহত হন বেশ কিছু পুলিশ কর্মী।

পরে সন্ধ্যার দিকে পুলিশ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ প্রক্টর ওয়াসিম আহমেদ খান বলেন, ‘কোনও আগাম অনুমতি না নিয়েই পুলিশ জোর করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। আমাদের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয় এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।’

এদিকে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা চিন্ময় বিসওয়াল এনডিটিভিকে জানান, উন্মত্ত জনতা পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেই পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোথা থেকে এই হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছে তা খতিয়ে দেখতেই সেখানে প্রবেশ করি।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com