খারাপ কোলেস্টেরল মানবদেহের জন্য যে ক্ষতিকর, এ কথা প্রায় সবার জানা। বেশি কোলেস্টেরল মানেই উচ্চ রক্তচাপ। এ কারণে দুটোই নীরব ঘাতক। নীরব বলার কারণ হলো, হয়তো টেরই পাবেন না যে, আপনি ভয়ঙ্কর মাত্রায় কোলেস্টেরল নিয়ে ঘুরছেন। তাই নিজ উদ্যোগে নিজের কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
ঝুঁকি : কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকার কারণে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ ও বুকব্যথার মতো সমস্যা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য ওষুধ, খাবারসহ জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিরোধ : রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণই উত্তম কাজ। সচেতন হয়ে কোলেস্টেরলের আনাগোনা ঠেকিয়ে রাখতে হবে। সুষম খাদ্যতালিকা অবহেলা করা যাবে না।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে যেসব খাবার : জইচূর্ণ বা ওটমিল চেনেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সচরাচর ওজন কমানোর জন্য অনেকেই ওটমিল খেয়ে থাকলেও এ খাবারটির অন্যতম গুণ হলো- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখা। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো বহু জটিল রোগও নিয়ন্ত্রণে রাখে ওট। গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে- এমন ব্যক্তি প্রতিদিন মাত্র তিন গ্রাম ওট খেলে তাদের দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক হয়।
সয়াবিন : সয়াবিনে থাকা আমিষ বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এর হাইপার-কোলেস্টেরোলেমিয়া নামক উপাদান রক্ত থেকে দূষিত কোলেস্টেরল (এলডিএল) উল্লেখ করার মতো কমিয়ে ফেলে রক্তের ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়িয়ে দেয়। ধমনিতে জারণ প্রক্রিয়া প্রতিহত করতে দূষিত কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে।
সবুজ চা : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ ও কালো চা রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়া প্রতিহত করে। সবুজ চায়ের কেটচিনস এবং কালো চায়ের থিফলেভিনস নামের উপাদান এভাবেই দেহকে বিভিন্ন কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখে।
বার্লি : সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ করে হৃৎপি- সুস্থ রাখার অনন্য উপাদান হলো বার্লি। রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে জইয়ের চেয়েও বেশি কার্যকর এ বার্লি। রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে তা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে বার্লি।
ইসবগুল : কোলেস্টেরলের যৌগে থাকা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ইসবগুলের ভুসি। উচ্চমাত্রার আঁশজাতীয় এ খাবারটি সুস্থ রাখে হৃৎপি-ও।
কমলার রস : টকমিষ্টি স্বাদের কমলার রস কোলেস্টেরল কমানোয় মহাদাওয়াই হিসেবে কাজ করে। গবেষকরা জানিয়েছেন, কমলার রস হাইপার-কোলেস্টেরোলেমিয়া রক্তের লিপিড প্রোফাইলের উন্নতি ঘটায়। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- কমলার রসে ভিটামিন-সি, ফোলেট এবং হেসপিরিডিনের মতো ফ্লেভনয়েড উপদান থাকে।
কাঠবাদাম : হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদান মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ফাইবার থাকে কাঠবাদামে। এটি ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ২০১১ সালে নিউট্রিশন রিভিউতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঠবাদামের মতো গাছের বাদাম খেলেও মানবদেহের খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা) কমে যেতে সাহায্য করে। এর ফলে করোনারি ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি ৩ থেকে ৯ শতাংশ কমে। কাজেই কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসব খাবার খাওয়া আপনার জন্য অনেক ভালো।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান শিশু হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
শেরেবাংলানগর, ঢাকা