শিশুশিল্পী হিসেবে পর্দায় জনপ্রিয়তা অর্জন করে হারিয়ে গেছেন কিংবা বড় হয়ে সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি এমন অভিনয়শিল্পীর সংখ্যা অনেক; কিন্তু যারা ছোট থেকেই সফলভাবে পথ চলছেন তাদের সংখ্যা হাতেগোনা। আমাদের আজকের আয়োজন এমন কিছু নায়িকা নিয়ে, যাদের পথচলা শুরু হয়েছে শিশুশিল্পী হিসেবে। আর নায়িকা হিসেবেও স্থান করে নিয়েছেন দর্শকের মনে। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ
শাবানা
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী। ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার প্রকৃত নাম আফরোজা আক্তার রত্না। ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবি দিয়ে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। তিনি ১৯৬৬ সালে ইবনে মিজান পরিচালিত ‘বনবাসে রূপবান’ ও মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাকবাবু’তে অভিনয় করেন। প্রথমবার নায়িকা হয়ে চলচ্চিত্রে তার আগমন ঘটে ১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরী’ সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমায় তিনি পাকিস্তানি অভিনেতা নাদিমের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। ৩৬ বছর চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় ৩০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে তার সর্বশেষ সিনেমা আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ মুক্তি পেয়েছিল।
সুচরিতা
১৯৫৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা সুচরিতার প্রকৃত নাম বেবী হেলেন। অসংখ্য জনপ্রিয় ব্যবসাসফল ছবির এই সুঅভিনেত্রীর শুরুটা হয়েছিল একজন শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৬৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘বাবুল’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়। এর পর তিনি একে একে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন নিমাই সন্ন্যাসী, অবাঞ্ছিত, রং বেরং, টাকা আনা পাই, কত যে মিনতি, রাজ মুকুট ছবিতে। ১৯৭২ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘স্বীকৃতি’ ছবি দিয়ে প্রথমবার নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটে। অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় ১৫০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৯৯৭ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
অন্তরা
নব্বই দশকের জনপ্রিয় ও ব্যস্ত এই নায়িকার প্রকৃত নাম পারভীন আক্তার লাকী। শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলা, দারাশিকো, বোনের মতো বোন ছবিতে অভিনয় করেছেন। নায়িকা হিসেবে তার অভিষেক ঘটে ১৯৯৩ সালে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘পাগল মন’ ছবি দিয়ে। টিভি অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে নায়িকা অন্তরার বিপরীতে ‘প্রেমের কসম’ ছবি দিয়ে। তার অভিনীত ছবির সংখ্যা ১৩টি। ২০১৪ সালে ৮ জানুয়ারি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়ে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন এই নায়িকা।
পূজা চেরি
বর্তমান সময়ের আলোচিত নায়িকা তিনি। ২০১২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। শাহীন সুমন পরিচালিত ‘ভালোবাসার রঙ’ সিনেমায় প্রথম দেখা যায় তাকে। এর পর শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি কাজ করেন- তবুও ভালোবাসি, অগ্নি, ভালোবাসতে মন লাগে, ব্ল্যাকমেইল, কৃষ্ণপক্ষ, বাদশা দ্য ডন ছবিতে। নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ২০১৮ সালে অভিমন্যু মুখার্জি পরিচালিত ‘নূর জাহান’ দিয়ে। একই বছর তার আরও দুটি ছবি মুক্তি পায়। এগুলো হলো- রায়হান রাফি পরিচালিত ‘পোড়ামন’ ও ‘দহন’। দুটি ছবিতেই নায়ক ছিলেন সিয়াম আহমেদ। বর্তমানে তিনি শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে অভিয়ন করছেন।
দীঘি
তার ভালো নাম প্রার্থনা ফারদিন। তিনি দীঘি নামেই পরিচিত। সেই দীঘি, ‘বাবা জানো, আমাদের একটা ময়না পাখি আছে না…’। শিশুশিল্পী হিসেবে তাকে দেখা গেছে ৩০টির বেশি সিনেমায়। কাবুলিওয়ালা, এক টাকার বৌ আর চাচ্চু আমার চাচ্চু- এই তিন সিনেমা তাকে এনে দিয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পাঁচটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দীঘি। এর মধ্যে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘তুমি আছো তুমি নেই’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তার। মুক্তি পেয়েছে সেলিম খান পরিচালিত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’। ছবিটি কিশোর বঙ্গবন্ধুর ওপর। দীঘিকে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা রেণুর ভূমিকায়। শিশুশিল্পী হিসেবে দীঘি ২০০৬ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিতে অভিনয় করেন। প্রথম ছবি দিয়েই বাজিমাত করেন। এর পর চাচ্চু, দাদীমা, সাজঘর, অবুজ শিশু, কপাল, ১ টাকার বউ, পিরিতের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ, পাঁচ টাকার প্রেম, রিকশাওয়ালার ছেলে, চাচ্চু আমার চাচ্চু, জীবন মরণের সাথী, টপ হিরো, ছোট্ট সংসার, তোর কারণে বেঁচে আছি, দ্য স্পীড, লীলামন্থনসহ আরও অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন।