করোনা মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আটটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে পুরনো রূপে ফেরে উচ্চশিক্ষার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান। করোনায় আক্রান্ত এক পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় তার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
মহামারীর কারণে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের আট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছর ‘ক’ ইউনিটে মোট আবেদনকারীর সংখ্যা এক লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ জন। আসন সংখ্যা এক হাজার ৮১৫টি।
রাজধানীর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ফাহিম রহমান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক দিন ধরে মাথাটা ভারী হয়ে আছে। এইচএসসি পরীক্ষা না দিতে পারলেও ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনেক পড়তে হয়েছে।’
কার্জন হলের কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত সুন্দর এবং সুষ্ঠু পরিবেশে হচ্ছে। সবার সহযোগিতার জন্যই এটি সম্ভব হয়েছে।’ ‘ক’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী মিহির লাল সাহা বলেন, ‘কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর ছাড়াই ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।’
আজ শনিবার কলা অনুষদের ‘খ’ ইউনিট, ২২ অক্টোবর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ‘গ’ ইউনিট, ২৩ অক্টোবর সামাজিক বিজ্ঞানের ‘ঘ’ ইউনিট এবং ৯ অক্টোবর চারুকলা অনুষদের ‘চ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ) জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সাত হাজার ৮১২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান জানান, সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
চবি সংবাদদাতা জানান, সেখানে ১১ হাজার ১৯৪ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে আসা নারী অভিভাবকদের জন্য ছাত্রীদের হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে শাটল ট্রেনও চলেছে প্রায় ১৮ মাস পর।
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, সেখানে তিন হাজার ৩০৫ শিক্ষার্থী আবেদন করলেও উপস্থিতি ছিল ৭৭ শতাংশ। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা দিতে আসা সুমন আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এবারের ভর্তি পরীক্ষা নিজ নিজ জেলায় হওয়ায় কোনো রকম ভোগান্তি হয়নি। এ জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’
সামিয়া সোলতানা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যদিও মেডিক্যালের প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে আছে। তাই পরীক্ষা দিয়েছি। অন্যবারের তুলনায় এবার প্রশ্ন সহজ হয়েছে। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।’
রাবি প্রতিনিধি জানান, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পেরে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থির মধ্যে ঢাকায় যেতে হয়নি বলে তারা অনেক ধরনের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর জানায়, শুক্রবার রাবি ক্যাম্পাসে ঢাবির ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৪ হাজার ৩৪৬ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। আজ ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেবেন ছয় হাজার ৩৭১ জন। এ ছাড়া ৯ অক্টোবর ‘চ’ ইউনিটের পরীক্ষায় এক হাজার ৯৭৭ জন, ২২ অক্টোবর ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় এক হাজার ৮২৪ জন ও ২৩ অক্টোবর ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১২ হাজার ৬ জন অংশ নেবেন।
নাটোর থেকে মেয়েকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে অভিভাবকদের থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সে দিক থেকে প্রতিবছরই যদি বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষা হয়, তা হলে আমাদের আর কোনো সমস্যার মুখে পড়তে হবে না।’