আন্দোলনের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ একই সঙ্গে চলবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন সভা ও সেমিনারের পাশাপাশি দ্রুত তৃণমূলের পুনর্গঠন কাজও সম্পন্ন করতে চায় দলটি। চূড়ান্ত আন্দোলের আগেই এই পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব ইউনিট কমিটি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে দলের নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠকের পর সারাদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত শনিবার ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক টিমের নেতাদের ডেকেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি পুনর্গঠন কাজ চলতে থাকলে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়েও সুবিধা হবে। বিশেষ করে কোন নেতার কী পারফরম্যান্স, সেটাও বোঝা যাবে। আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্বে পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না হলে নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েও পদ হারাতে হবে।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমাদের সময়কে বলেন, আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান দ্রুত পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে। সে অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক উপজেলা, থানা, পৌর, জেলা ও মহানগরের পুনর্গঠন কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারাদেশেই এই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৮টিতে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। ১০টিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে ৩১টি এবং বিলুপ্ত করা হয়েছে দুটি। এর মধ্যে সাংগঠনিক জেলা হলো- পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ময়মনসিংহ মহানগর, ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, নেত্রকোনা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলা। নীলফামারী ও মানিকগঞ্জে আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশমতো কাজ শেষ করেছে। তবে সম্প্রতি ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ এখনো রয়েছে। ফরিদপুর ও লক্ষ্মীপুর কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাকি কোনো কমিটিরই মেয়াদ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশনা পাওয়ার পর গত শনিবার স্থানীয় এক হোটেলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, ওয়ারেছ আলী মামুন বিভিন্ন জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। পৃথকভাবে নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ দক্ষিণ, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা এবং ময়মনসিংহ মহানগর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। সভায় জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র সহসভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, সব সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সব যুগ্ম আহ্বায়করা এতে অংশ নেন। বৈঠকে জেলা ও মহানগর নেতারা স্ব স্ব ইউনিটের সাংগঠনিক রিপোর্ট দেন। রিপোর্টের ওপর আলোচনার পর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা, পৌর, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক টিমের সঙ্গে মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি বসবেন তারেক রহমান। সেখানে সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নুকে দপ্তর থেকে ফোন করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, থানা উপজেলা পৌরসভাসহ সব পর্যায়ের কমিটি দ্রুত গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন, দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত, ভালো সংগঠক তাদের দিয়ে কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। যারা এলাকায় থাকেন না, দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নন, তাদের কমিটিতে না রাখার নির্দেশনা রয়েছে।
বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৃণমূলকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু হামলা-মামলা, করোনাসহ নানা অজুহাতে কমিটির মেয়াদ বাড়িয়েছে। তার পরও কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। আর যারা কমিটি গঠনের কাজে হাত দিয়েছেন, অনেকের বিরুদ্ধে যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কমিটি গঠনে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কাউকে পদ দেওয়ার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও রয়েছে।