আমাদের শরীর কীভাবে সূর্যের উষ্ণতা কিংবা প্রিয়জনের আলিঙ্গন অনুভব করে, সেই রহস্যের জট খুলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল জিতে নিলেন ডেভিড জুলিয়াস ও আরদেম পাতাপুতিয়ান। গতকাল সোমবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে নোবেল কমিটি এই দুই আণবিক জীববিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করে। ডেভিড জুলিয়াস যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। অন্যদিকে পাতাপুতিয়ান লেবানিজ বংশোদ্ভূত। শারীরিক অনুভূতিকে আমাদের দেহ কীভাবে বৈদ্যুতিক বার্তায় রূপান্তর ঘটায়, সেটা অনুসন্ধান করাই ছিল এ দুই বিজ্ঞানীর মূল উদ্দেশ্য। তাদের এই গবেষণা বিভিন্ন রকমের ব্যথার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চারপাশের পৃথিবীকে বোঝা কিংবা মানুষের টিকে থাকার জন্য উষ্ণতা, ঠা-া ও স্পর্শ খুবই জরুরি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমাদের শরীর কীভাবে সাড়া দেয়, তা এত দিন জীববিজ্ঞানে বড় একটা রহস্যের ব্যাপার হয়ে ছিল। নোবেল কমিটির সদস্য থমাস পার্লম্যান বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অসামান্য একটা আবিষ্কার।’
একটা গরম মরিচ খাওয়ার কারণে আমরা যে জ্বালাপোড়া অনুভব করি, মূলত তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়েই যুগান্তকারী এই গবেষণার পথে হাঁটা শুরু করেন জুলিয়াস ও পাতাপুতিয়ান।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মরিচের ক্যাপসাইসিন নামের যে উপাদানের কারণে জ্বালাপোড়া অনুভব হয়, মূলত সেটির উৎস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান জুলিয়াস। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনি নির্দিষ্ট কয়েকটি ‘রিসেপ্টর’ আবিষ্কার করতে সক্ষম হন, যেগুলো মূলত ক্যাপসাইসিনের সংস্পর্শে সাড়া দেয়। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এ দুই গবেষক দেখতে পান, এসব ‘রিসেপ্টরের’ কারণেই তাপমাত্রার সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরে নানা রকমের অনুভূতি তৈরি হয়। উদাহরণ হিসেবে শরীরে গরম কফি পড়ার কারণে সৃষ্ট জ্বালাপোড়ার কথা বলা যেতে পারে।
তাদের এ গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এরই মধ্যে তাপবিষয়ক আরও অনেক ‘সেন্সর’ আবিষ্কার হয়েছে। ঠা-া শনাক্ত করার সেন্সরও খুঁজে পেয়েছেন জুলিয়াস এবং পাতাপুতিয়ান।
জুলিয়াস সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। আর পাতাপুতিয়ান কাজ করেন ‘আমেরিকান স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’। পুরস্কার হিসেবে ১১ লাখ মার্কিন ডলার পাবেন এই দুই গবেষক।