টাকা-পয়সাসহ বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়া রাজধানীর পল্লবীর তিন কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার ভোরে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিন ছাত্রী জানিয়েছেন, অবাধ স্বাধীনতার লোভ পেয়ে বসেছিল তাদের। সে লক্ষ্যে তারা সমুদ্রপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার পল্লবীর ১১ নম্বর প্যারিস রোডের সি-ব্লকের ১৮ নম্বর লাইন এলাকা থেকে ওই তিন কলেজছাত্রী ‘নিখোঁজ’ হন। এ ঘটনায় শনিবার রাতে পল্লবী থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করেন নিখোঁজ এক ছাত্রীর বোন। মামলার চার আসামি হলেন- পল্লবীর বাসিন্দা মো. রকিবুল্লাহ (২০), মো. তরিকুল্লাহ (১৯), জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়ন (১৮)। এদের মধ্যে রকিবুল্লাহ রিমান্ডে রয়েছেন।
র্যাব ৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, মামলার ছায়া তদন্তে ওই ৩ ছাত্রীর অবস্থান কক্সবাজার বলে নিশ্চিত হয় র্যাব। পরে র্যাবের একটি টিম তাদের উদ্ধারে
কক্সবাজারে যায়। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিন ছাত্রী। এর পর আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। শিগগিরই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ওই ৩ ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জেনেছে, তারা ৩ বান্ধবী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অন্যদিকে তাদের পরিবার লেখাপড়া ও ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিতে থাকে। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েন। পরিবারের এসব আচরণ তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চাভিলাসী জীবনযাপন পছন্দ করতেন। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি, বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন।
র্যাব জানায়, তারা বেশি বেশি জাপানি সিনেমা-সিরিয়াল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে জাপানি ভাষা কিছুটা আয়ত্ত্ব করে নেন। তারা স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
র্যাব আরও জানায়, তারা ২ মাস আগে বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে যান। সেখানে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। হাফসার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে সমুদ্রপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশে তারা ৩ বান্ধবী গৃহত্যাগ করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তারা বাসা থেকে বের হওয়ার পর মোবাইল ভেঙে ফেলেন। পরে তারা হাফসার পাঠানো দুই লোকের মাধ্যমে মাইক্রোবাসে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছেন। চট্টগ্রামের ট্রেন না পেয়ে তারা বাসযোগে কুমিল্লার ময়নামতি যান। পথিমধ্যে তারা নতুন মোবাইল কেনাসহ পশ্চিমা বেশ-ভূষা ধারণ করেন। চট্টগ্রাম থেকে তারা বাসে কক্সবাজার যান।
গত শুক্রবার থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা কলাতলিতে একটি হোটেলে অবস্থান করেন। এ সময় হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামের দুই লোক তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও কিছু টাকা নিয়ে নেয়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে আবার নিজেদের বাসায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।