আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আরও দুবছর। কিন্তু এখনই মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতি। চলছে বাগযুদ্ধ। নির্বাচন ইস্যুতে বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। এ নিয়ে সহসা দল দুটির মধ্যে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুতে বিএনপি আলোচনায় বসার আগ্রহের কথা জানালেও তা নাকচ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তাপ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই উত্তাপ দেখা যেতে পারে রাজপথেও।
মাঠের বিরোধী দল বিএনপি আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে দলের কর্মকৌশল চূড়ান্ত করছে। বর্তমান সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। সরকার আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতায় না এলে রাজপথে এর ফয়সালা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সরকার পতনের এক দফা চূড়ান্তে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। পেশাজীবীসহ নাগরিক সমাজের মতও নেবে দলটি।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে দলের নীতিনির্ধারকরা এ ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে। সংলাপের মধ্য দিয়ে তারা একটি সমাধান চান। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সে রকম ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, সরকার চাইলে বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি।
তবে সেই আলোচনায় একটিমাত্র এজেন্ডা থাকতে হবে। সেটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনের আগে যে আলোচনা হয়েছে আর এখন যে আলোচনা হবে তা এক নয়। নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার এই একটি এজেন্ডা থাকলে আলোচনা করতে রাজি আছি। আমরা একটা জিনিসই চাই তা হলো নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার।
ফখরুল আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের নাম নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যে কোনো নামই হতে পারে। তবে নির্বাচনকালীন সময় যে সরকার থাকবে তা কোনো দলীয় সরকার হবে না।
তবে বিএনপির দাবিকে তোয়াক্কাই করছে না আওয়ামী লীগ। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এ দেশে আর কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। পাশাপাশি এ ইস্যুতে বিএনপি রাজপথে অরাজকতার চেষ্টা করলেও তা শক্তহাতে মোকাবিলা করা হবে।
ক্ষমতাসীনরা যে আলোচনায় বসতে আগ্রহী নয় তা দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আলোচনায় বসতে বিএনপি রাজি-দলটির মহাসচিবের এমন আগ্রহ প্রকাশের একদিন পর তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বুধবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই।
নিরপেক্ষ সরকার নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচন সংক্রান্ত সবকিছুই নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনই সর্বেসর্বা। সরকার তখন শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করে থাকে। আর নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বাধীন, কর্তৃত্বপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতা করে থাকে সরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী নির্বাচনের আগে ফের একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে নানা মহলেই প্রশ্ন ওঠেছে। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন হিসাবে তারা দায়িত্ব পালনে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীতে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। কমিশন গঠনে দলগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি না হলে তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে এখনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হতে পারে। কারণ, নির্বাচনের এখনো দুবছর বাকি। এ মুহূর্তে সংলাপে বসলে একটা ইতিবাচক সমাধান আসতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে বসতে হবে।
গণতন্ত্রে যে কোনো সংকট সমাধানের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে আলোচনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে কোনো কিছু সমাধানের পক্ষে নয়। যার যার অবস্থানে তারা অনড়। এভাবে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে কোনো কিছুর সমাধান আসবে না। তাছাড়া নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি কোনো কিছুর সমাধান সম্ভব হবে না।