শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কথা নেই বিএনপির

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১
  • ১২৩ বার

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আর কোনো ইস্যুতে আপাতত সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষিতে যেতে চায় না বিএনপি। আগের দুই সংসদ নির্বাচনের আলোকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে তারা এবার কোনো ছাড় দেবেন না। আন্দোলনের ছকও কষা হচ্ছে এই এক দফা সামনে রেখেই।

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবেন। এ নিয়ে বিএনপির মনোভাব হলো- নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষ হোক, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে ভোট গ্রহণযোগ্য হবে না। উদাহরণ হিসেবে আগের দুই নির্বাচনকে তুলে ধরছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য হলো- ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে আলোচনা হয়েছে, আর এবার যে আলোচনা হবে-তা এক নয়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার-এই একটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে রাজি আছি।’

বিএনপির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক, দুদিক থেকেই সরকারকে চাপে ফেলতে হবে। রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে পারলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। এই চিন্তা থেকেই বিএনপি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে। নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ লক্ষ্যে গত মাস থেকে বৈঠক করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। এসব বৈঠকে যেসব প্রস্তাব

এসেছে, সেগুলোকে চার ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- দাবি, আন্দোলনের প্ল্যাটফরম, কূটনীতি ও সাংগঠনিক অবস্থা।

আইনজীবীদের পাশাপাশি ২২ পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে বিএনপি। অচিরেই মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রস্তাবনা তৈরি হবে। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির পরবর্তী যে কোনো বৈঠকে এই প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। এর পর বিএনপি তাদের কর্মপরিকল্পনা সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে তুলে ধরবে।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে?’ নতুন রূপরেখায় এই প্রশ্নেরও জবাব দেবে বিএনপি।

গত সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি গঠন করবেন। তার মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন হবে। আগের দিন একই কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘সার্চ কমিটি নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। আমাদের মূল ভাবনা হলো- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। এর বাইরে আর কোনো ভাবনা আপাতত আমাদের মাথায় নেই।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে গুণগত পার্থক্য কোথায়; ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে; বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করার সুযোগ পাবে কিনা; জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পাবে কিনা; প্রশাসন কি দলীয় মুক্ত থাকবে- এ ধরনের নানা প্রশ্ন ভোটারদের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। এ জন্য এসব প্রশ্নের উত্তরও নতুন রূপরেখায় রাখতে চায় বিএনপি।

বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর জোটগত নয়; বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক করবে। নতুন নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে সম্প্রতি যে ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের মতামতও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ‘এই সরকার পদত্যাগ করলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হবে না। এ জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। ফলে ছোটখাটো আন্দোলনে হবে না। আর এই আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। শুধু দলীয় কর্মীদের দিয়ে, দৃঢ় সমর্থকদের দিয়ে গণ-আন্দোলন হয় না। গণ-আন্দোলনে ব্যাকরণ অনুযায়ী আন্দোলনকে ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ ও তীব্র করতে হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা দেখছি না। এটিই জাতির বড় সংকট।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজপথে যারা বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা জানাবে, তাদের নিয়েই বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে তোলা হবে। আর বিএনপির দাবির প্রতি একমত হওয়ার পরও কোনো দল বা ব্যক্তি বৃহত্তর মঞ্চে আসতে না চাইলে তাদেরও মতামত নেওয়া হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এককভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে রাজপথে নামব। আমাদের দাবির পক্ষে যারা রাজপথে থাকবেন, বিভিন্ন সভা ও সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তাদেরই আমরা আন্দোলনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নেব।’

দাবি আদায়ে সমমনা দলগুলোকে এক প্ল্যাটফরমে এনে যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তা করছে বিএনপি। জামায়াত ইস্যুতে যেসব দলের আপত্তি রয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনে গেলে তা অনেকটা দূর হবে বলে মনে করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে অবশ্যই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না। মানুষ রাজপথে নেমে এই সরকারকে হটিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com