অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস। তবে নারীদের মধ্যে যত ধরনের ক্যানসার হয়, তার এক-চতুর্থাংশই জরায়ুমুখের ক্যানসার। এই ক্যানসারের প্রবণতা উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশে বেশি। এর মূল কারণগুলো হচ্ছে- সচেতনতার অভাব, লজ্জা, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থা, নিজের গোপনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতার অভাব, অল্প বয়সে বিয়ে এবং সন্তান প্রসব, অধিক সংখ্যক যৌনসঙ্গী, যা এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণের মধ্যে একটি কারণ প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর তা হচ্ছে, এইচপিভি ভাইরাস সংক্রমণ। এ সংক্রমণ হয়ে থাকে অধিক সংখ্যক পুরুষের সঙ্গে মেলামেশার কারণে।
জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত ১০০ রোগীকে পরীক্ষা করে ৯৯ জনের জরায়ুমুখে এইচপিভি ভাইরাসের জেনম পাওয়া গেছে। অন্যসব ক্যানসারের মতোই জরায়ুমুখের ক্যানসারে মৃত্যুঝুঁকি খুব বেশি। তবে সূচনায় নির্ণয় করা গেলে এই ক্যানসারও নিরাময় করা সম্ভব। বর্তমানে এই ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য সারা বিশ্বে প্যাপানিকুলা (পিএপিএস) টেস্ট নামে একটি সহজ পরীক্ষা চালু আছে।
এই পরীক্ষা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে করা হচ্ছে। বিশেষ করে এনাম মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতালে স্তন ক্যানসারের সচেতনতার এই মাসে ফ্রি চেকাপসহ চিকিৎসার সুব্যাবস্থা হাতে নিয়েছে বরাবরের মতোই। এ ছাড়া এখানে ভায়া (ভিআইএ) টেস্টের মাধ্যমেও প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। এই রোগীর প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে, অনবরত সাদা স্রাব ভাঙা, কখনোবা একটু রক্তমিশ্রিত অথবা যৌনমিলনে সামান্য রক্তপাত হওয়া।
এই লক্ষণগুলোর কোনো একটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে, ক্যানসার হয়েছে কিনা। প্রাথমিক পর্যায় ১ ও ২ নম্বরে সার্জারি ও রেডিওথেরাপি, দ্বিতীয় পর্যায় ২ বি এবং ৩ নম্বরে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি এবং চতুর্থ পর্যায়ে কষ্ট লাঘব ও ব্যথা উপশম এবং জটিলতার চিকিৎসা দেওয়া হয়। সম্প্রতি এইচপিভি ভাইরাস প্রতিষেধক টিকা বেরিয়েছে। বাংলাদেশেও এ টিকা পাওয়া যাচ্ছে। কিশোরী বয়সে বিশেষ করে ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সে এই টিকার ৩টি ডোজ নিলে তা জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এই ক্যানসার সম্পূর্ণ ভালো হওয়া সম্ভব। তাই শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তবে সব কিছুরই আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেওয়া ভালো। তবে সচেতনতা থেকে মনোবল শক্ত রাখা উচিত। মনে রাখবেন, শুরুতেই ধরলে পড়া যে কোনো রোগ থেকেই মুক্তি লাভ সম্ভব, বিশেষ করে ক্যানসার।
লেখক : রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, অধ্যাপক ও প্রধান অনকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা